নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিনি,মঙ্গলবার, ২৬ জুন ২০১৮: চট্টগ্রামে দুমাস ধরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার এক তরুণী (২২) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই তরুণী এখন অনেকটা স্মৃতি শক্তি হারিয়ে বাকরুদ্ধ।
তরুণীর মা মাজেদা বেগমের অভিযোগ, গত দুমাস ধরে মানুষরূপী একদল হায়েনার তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। এ নরপশুরা তাকে দিয়ে দুমাস দেহ ব্যবসায় বাধ্য করেছে। কখনো দেহ ব্যবসায় রাজি না হলে তার উপর চালিয়েছে নির্যাতনের স্টিম রোলার।
জানা যায়, দু মাস একটানা পাশবিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর অনেক মৃত অবস্থায় তাকে বায়েজিদ থানার অদূরে মোহাম্মদ নগর কাঁচা বাজারের সামনে ফেলে চলে যায়। গত ১৯ জুন তাকে প্রায় মৃতবস্থায় উদ্ধার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ।
২২ বছর বয়সী পারুল (ছদ্ম নাম) পেশায় পোশাক শ্রমিক। গত দু বছর ধরে বায়েজিদ এলাকায় মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। সংসার চালানো জন্য পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
স্বামী পরিত্যাক্তা এ পারুলের মা মাজেদা জানান, ‘গত দু বছর আগে হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে চলে যায় পারুল। মাঝে মধ্যে বাসায় আসা যাওয়া করত। গত তিন মাস আগে ইসমাইল নামে এক ছেলের সাথে পারুলের বিয়ে হয়।’
পারুল জানান, ‘গত দুমাস আগে স্বামী ইসমাইলের গ্রামের বাড়ী নোয়াখালী থেকে বাসে করে নগরীর জিইসি মোড়ে নামেন। মায়ের বাসায় যাওয়ার জন্য সে অপেক্ষা করছিল, এ সময় পূর্ব পরিচিত আলম নামে এক লোক তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে সিএনজি উঠায়। এরপর পারুলকে অজ্ঞাত স্থানে জেরিনা নামের এক যৌন কর্মীদের সর্দারীনির বাসায়। সেখানে জেরিনা ও তার স্বামী বাবুল তাকে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করে। রাজি না হওয়ায় তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। এ ভাবে চলে একটানা দুমাস। বাবুল, রফিক, আলম আর জেরিন মিলে তাকে নিয়ে মেতে উঠে নোংরা এ খেলায়।’
‘অবশেষে গত সোমবার রাতে মরে গেছে ভেবে অনেকটা বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে যায় তারা।’
চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের সর্দার মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘পারুলকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তার শরীরে একটি বোরকা ছাড়া আর কোন কাপড় ছিল না। রক্তাক্ত দেহটি অনেকটা নিথর অবস্থায় ছিল। অবস্থা ছিল আশংকাজনক।’
তিনি জানান, ‘ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের আয়া শিউলি, মিনুয়ারা ও রিপুর আন্তরিক সেবায় ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে পারুল। পারুলকে সুস্থ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এ তিন আয়া।’
বেলাল বলেন, বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে টিম করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় পারুলকে। ক্যাজুয়ালটিতে না রেখে অন্য ওয়ার্ডে রাখলে এত দিনে হয়তো মারা যেত পারুল। বর্তমানে তাকে মানসিক চিকিৎসা সেবাও দেয়া হচ্ছে। দু এক দিনের মধ্যে পারুলের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে বলে হানান তিনি।
এদিকে পারুলের মা মাজেদা জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে তার মেয়ের এ করুন পরিণতির খবর জানতে পেরে তিনি গত দুদিন আগে হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখতে পান।
তিনি জানান, ‘তাঁর মেয়ের জীবন বিপন্ন করে দিয়েছে চক্রটি।’
চমেক হাসপাতালে পারুলের সাথে কথা বলার সময় লক্ষ্য করা গেছে তাঁর শরীরের হাত, পায়ে, ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন।
পারুল অনেকটা ক্ষীণ স্বরে বলেন ‘আলম, বাবুল, রফিক আর জেরিন মিলে তার জীবন ধংস করে দিয়েছে। গত দুমাসে নানা কায়দায় সব ধরনের নির্য়াতনই করেছে তাকে। দেহ ব্যবসায় রাজি না হলে পানি পর্যন্ত দেয়া হয়নি তাকে।’
এদিকে এ ঘটনার সাথে তার প্রেমিক স্বামী ইসমাইল জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাছাড়া দীর্ঘ দুমাসেও স্ত্রীর খবর না নেওয়ার বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে পুলিশকে।
এদিকে চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই জহির বলেন, ‘মেয়েটিকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মানসিক আঘাতের কারণে এখনো এলোমেলো কথা বার্তা বলছে। বিষয়টি বায়েজিদ থানার ওসি তদারকি করছেন।’
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, ‘গত ১৯ জুন মেয়েটিকে মুমুর্ষূ অবস্থায় রাস্তায় পাওয়া যায়। পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েটি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তার কথা বার্তা অসংলগ্ন। এ ছাড়া মানসিক ভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর একটু সুস্থ হলে তার সাথে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য জেনে তারপর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’