লক্ষন বর্মন, নরসিংদী প্রতিদিন বৃহস্পতিবার ২৮ জুন ২০১৮:নরসিংদীর রায়পুরায় স্বামী ও দুই সন্তান নিহতের ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দেবর,ননদ,ভাসুর ও নিকট আত্মীয়রা পরিকল্পিত ভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বুধবার দুপুরে নিহতের স্ত্রী সাদিয়া বেগম বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামী করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট নাহিদা রহমান মিতু আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলো নিহত কাজলের ভাই জলিল মোল্লা,সামসুউদ্দিন মোল্লা,হারুন মোল্লা,নিহতের বোন বেবি আক্তার ও আয়েশা আক্তার। তাদের স্বামী রুহুল আমীন ও নজরুল মোল্লা।
গেল শুক্রবার সকালে রায়পুরা তুলাতলী গ্রামে দুই সন্তান সহ কাজল মোল্লার লাশ পাওয়া যায়। ওই সময় দারিদ্রতা,ঋনগ্রস্থ ও মামলায় পরাজিত হয়ে ক্ষোভে-দু:খে হতাশাগ্রস্থ হয়ে দুই সন্তানকে হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছন পুলিশ ও নিহতের পরিবারের।
আদালত সূত্রে জানাযায়, রায়পুরা উপজেলার তুলাতলী গ্রামের কাজল মোল্লার সাথে জমি সক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার আপন ভাই বোনের সাথে দন্ধ চলে আসছিল। এই দন্ধ মিটানোর জন্য স্থানীয় ভাবে ১৫/১৬ বার সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু সমাধান হয়নি। দন্ধ চরম পর্যায়ে পৌছে গেলে গত তিন বছ পূর্বে নিহত কাজল তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শিবপুররের পুটিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসয় বসবাস করতো। ঘটনার আগের দিন কাজলকে বাড়ীতে যাওয়ার জন্য তার বড় ভাই খবর পাঠান। এই খবর পেয়ে নিহত কাজল তার বড় মেয়ে কাকলী আক্তার (৮) ও ছেলে সোয়ান মোল্লা (৫) কে নিয়ে দাদা’র বাড়ী যায়। পর দিন সকালে খবর পাওয়া যায় তারা মারা গেছেন। এ ঘটনায় রায়পুরা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়।
মামলার বাদী সাদিয়া বেগম বলেন, জমিজমা আত্মসাতের জন্য পরিকল্পিত ভাবে আমার স্বামী-সন্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও আমার স্বামীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পরে বাড়ী ছেড়ে চলে আসি। স্বামী সন্তান মারা যাওয়ার পর ময়না তদন্তের নাম করে ভাসুর হারুন মোল্লা আমার কাছ থেকে খালি কাগজে সই নিয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। যাতে করে আমি হত্যা মামলা দায়ের করতে না পারি।
বাদী পক্ষের আইনজীবি টুটুল খান চুন্নু বলেন, মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তদর্ন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রায়পুরা থানার ওসিকে নিদের্শ প্রদান করেন। একই সাথে এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
ঘটনার পরপর পুলিশ জানান, নিহত কাজল মোল্লা বিদেশে যাওয়ার জন্যে রুহুল আমিন নামে একজনকে টাকা দেয় কাজল। রুহুল আমিন টাকা ফেরত দিতে টাল বাহানা করায় কাজল তার বিরুদ্ধে নরসিংদী আদালতে মামলা দাযের করেন। সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে মামলার রায় কাজলের বিপক্ষে যায়। মামলা হেরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তুলাতুলী হাসপাতাল সংলগ্ন নিজ পৈতৃক বাড়ীতে আসেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় বাড়ী থেকে সন্তানদের নিয়ে বেড়িয়ে আসেন কাজল। শুক্রবার সকালে স্বজনরা খবর পান বাড়ির খানিকটা দুরে তুলাতুলী ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কাজল তার তার দুই সন্তানকে হত্যা করে সে ও আহত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন।
রায়পুরা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতে নির্দেশনা এখনো পাইনি। পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
#