নিজস্ব প্রতিবেদক*নরসিংদীপ্রতিদিন,বৃহস্পতিবার, ০৫ জুলাই, ২০১৮ খ্রি.
কোন শত্রুতা নেই, নেই কোন রাগ ক্ষোভ, নেই প্রতিপক্ষ থেকে মেরে ফেলার চুক্তিও। শুধুমাত্র ৫ হাজার টাকা, কি তারও কম টাকা পাওয়ার আশায় নির্বিঘেœ একজন মানুষকে শ্বাষরোধ কিংবা জবাই করে হত্যা করে ইদ্রিছ। এ রকম পৈশাচিক নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ১৫ জনের মতো অটো চালককে। নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে অকপটেই স্বীকার করে এমন নির্মম খুনের ঘটনা। যা কিনা কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের কথা মনে করিয়ে দেয়। যদি অধরা থাকতো তবে কি ইদ্রিস এরশাদ শিকদারের চেয়ে ভয়ঙ্কক হয়ে উঠতো। সে উত্তর পেতে জানতে হবে তার পৈশাচিকতার বর্ণনা। এই ইদ্রিছ যে কত মানুষের প্রাণ কেড়েনিয়েছেন তার কিছু বর্ণনা নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রয়েছে।
ইদ্রিস কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রাঙ্গালিবস এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। পড়ালেখায় খুব বেশি দুর এগোতে পারেনি। পারিবারিক দারিদ্রতার কারনে খুব অল্প বয়সে কাজের জন্যে ঢাকার নবাবপুরে আসা। সেখানে টুকটাক চুড়ি করে হাত পাকাতে থাকে ইদ্রিছ। তারপর আগমন ঘটে নরসিংদীতে। উদ্দেশ্য ছিনতাই, টার্গেট ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা। তার এসব কাজে সহযোগীতার জন্য সে তার এলাকার দুর সম্পর্কের চাচা ও বন্ধুকে সাথে নেয়। তারা মিলে প্রথমে কোন স্থানে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে অটো রিকশা। কিছদুর যাওয়ার পর কোন নির্জন স্থান দেখলেই সেই অটো চালকের দুই পাশ থেকে দুই জন গামছা প্যাঁচিয়ে জোড়ে টেনে ধরে। তাকে হত্যা করে নিয়ে যাওয়া হতো অটো রিকশাটি। সে অটো রিকশা বিক্রি করতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়, কখনো ৬০ হাজার টাকা। টাকার ভাগাভাগি করে একেকজন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো ভাগ পেত। তাদের লোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতে থাকে তাদের এই নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞ। এসব ঘটনায় কখনো ধরা পড়েনি তারা। এতে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠে ইদ্রিস। তার নজর পড়ে নরসিংদীর আশেপাশের জেলাসহ তার নিজের জেলাতেও। নরসিংদীর কয়েকজন সহযোগীকে সে সব অভিযানে নিয়ে যেতো। তার বিশ্বস্ত দুই সহযোগী চাচা শফিকুল ও ভাই সাইফুলকে সব কাজেই নিয়ে যেত। ইদ্রিস তার জেলা কুড়িগ্রামের কিছু সহযোগীকে সাথে জুটিয়ে নেয়। সেখানেও বেশ কয়েকটি অটো রিকশা ছিনতাই করে সে।
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ইদ্রিস তথ্য দেয়, গত ১৫ মাসে সে প্রায় ৯ জনকে হত্যা করে ইদ্রিছ। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৪২ মাস ইদ্রিছ অটো ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত রয়েছে। ইদ্রিস কতজন লোককে হত্যা করেছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। শ্বাষরোদ্ধ কিংবা জবাই ছিল তার হত্যার প্রধান উপায়। অটো রিকশা ছিনতাইয়ের সময় অনেক চাল কে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে যেত। তাদের কতজনের ভাগ্যে মরণ জুটেছে তাও অজানা। মানুষকে হত্যা করা ছিল তার কাছে সহজ একটি ব্যাপার। মাত্র ৩০ বছর বয়সী ইদ্রিসের নির্মমতা মনে করিয়ে দেয় খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের কথা।
তবে ইদ্রিসের নির্মমতার রেশ টেনেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধ। গত ৩০ জুন শনিবার প্রথম প্রহরে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে নিয়ে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর গুলি চালায়। সহযোগীদের গুলিতে ইদ্রিস নিহত হয়েছে বলে দাবী করে পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এভাবেই শেষ হয়েছে খুব অল্প বয়সে ভয়ঙ্কর খুনি হয়ে উঠা ইদ্রিছের।