নিজস্ব প্রতিবেদক*নরসিংদী প্রতিদিন,মঙ্গলবার,৩১ জুলাই ২০১৮ খ্রি.
নরসিংদী সরকারি কলেজে সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া ও কলেজের পুরোনো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার দুপুরে কলেজের শহীদ মিনার বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ‘ শিক্ষা সংস্কৃতি ও বিভিন্ন পরিক্ষার ফলাফলে নরসিংদী সরকারি কলেজের যে সুনাম ছিল। বর্তমান শিক্ষকদের গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা ও অধ্যক্ষ মহোদয়ের নানা অনিয়ম, লুটপাটের কারণে কলেজটিতে করুন অবস্থা বিরাজ করছে।’ এসময় কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বরাত দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘এ বছর কলেজের বিজ্ঞানাগারের জন্য সরকারের বরাদ্দ ছিল চার লক্ষ টাকা, অধ্যক্ষ মহোদয় নিয়ম অনুযায়ী তা টেন্ডার না দিয়ে, কেমিক্যাল ক্রয় না করে শুধু ভুয়া ভাউচার দিয়ে বিল করেছেন। কলেজের বাগান তৈরির জন্য গাছ, মাটি, শ্রমিক বিল বাবদ দুই লক্ষ টাকার বিল করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে নতুন একটা ফুল গাছও লাগানো হয়নি। এছাড়া কলেজের লাইব্রেরির জন্য বই কেনা বাবদ দুই লক্ষ টাকার বিল করা হয়েছে। কিন্তু নতুন একটা কোন বইও কেনা হয়নি। সকল ক্লাস রুমের জন্য বৈদ্যুতিক পাখা, লাইট ও তার ক্রয় বাবদ বিল করা হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মাত্র ৬/৭টি ফ্যান ক্রয় নতুন লাগানো হয়েছে। কলেজের ছোট গাড়ি কলেজের কাজে ব্যবহার হবার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ মহোদয় নিজেই পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন। এছাড়া কলেজের ছোট গাড়ি মেরামত বাবদ দুই লক্ষ টাকা এবং বড় বাসের ৪টি নতুন চাকা ক্রয় বাবদ বিল করা হয়েছে। কিন্তু তার একটিও করা হয়নি। কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত গত বছরের কিছু খাত এ বছর বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করার সময় এইসব খাতে অব্যবহিত অনেক টাকা ছিল। এই টাকার কোন হদিস নেই। কলেজে বিভিন্ন ক্লাস রুমের দরজা, বেঞ্চ সংস্কারের জন্য বিল করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোন সংস্কারই হয়নি।’
এছাড়া সমাবেশে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে আমরা পিতৃসমতুল্য মনে করি, আর ওনারা আমাদের রক্তচোষা চুষছেন। নিয়মিত ক্লাস না করে ভুয়া ভাউচারে উন্নয়নের নামে লুটপাট করছেন। একটা কলেজে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হয়ে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২৪ জন। এতে শিক্ষকরা কতটা দায়িত্বশীল তার প্রমান ফুটে উঠেছে।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী দিদার হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষ মহোদয়ের অসচেতনতা, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং, অধ্যক্ষ মহোদয়ের বিশেষ সিন্ডিকেটে ঢোকার জন্য শিক্ষকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অনার্স, ডিগ্রি ও মাস্টার্স পর্যায়ে ক্লাস একেবারে হয় না বললেই চলে। বহু শিক্ষক রয়েছেন যারা সপ্তাহে ২/১ দিন কলেজে আসেন। অধ্যক্ষ মহোদয় নিজেই সপ্তাহে ২/১ দিন আসেন। ঢাকা থেকে আগত শিক্ষকরা বেলা ১১টার ট্রেনে আসেন আবার ১ টার ট্রেনে কলেজ ছাড়েন।অনেকে আবার কলেজেই আসেন না। যেমন প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। যিনি যোগদানের পর থেকে কলেজে আসেননি।’
দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কলেজে আসি কিন্তু স্যাররা না আসায় ক্লাস করতে পারি না। তাদের শুধু সমস্যাই থাকে। প্রথম বর্ষে পুরো বছরে সব মিলিয়ে ৪০/৫০ ক্লাস হয়েছে।’
সাধারণ ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক জোবায়ের হিমেল জানান, ‘ নরসিংদী জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ, প্রাণের কলেজ নরসিংদী সরকারি কলেজ। এ বছর কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল দেখে খুবই মর্মাহত হলাম। কলেজের ফলাফল খারাপ হবার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর একটি হচ্ছে, অধ্যক্ষ মহোদয় সর্বশেষ গত অর্থবছরে অডিটকে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। যা কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মচারীরা জানেন। কোটি টাকার দুর্নীতি অনিয়ম ঢাকতে তিনি ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এই টাকা ওনি কোথায় পেয়েছেন? এটা আমাদের গরীব মেহনতি বাবা মায়ের ঘাম ঝরানো টাকা। এই টাকার প্রত্যেকটা পয়সার হিসেব উনাদের দিতে হবে। ’
অধ্যক্ষ ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘অডিটকে সবারই ম্যানেজ করতে হয়। আমরাও এর বাইরে নই। আর ছাত্রনেতারা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে। তা একটাও সত্য নয়। আমি যদি অনিয়ম করে থাকি তাহলে সরকারি বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সংস্থা এর তদন্ত করুক। যদি প্রমাণ পায়, আমি সকল শাস্তি মাথা পেতে নেব। ছাত্রনেতারা এ নিয়ে মাথা ঘামাবে কেন?’