নিজস্ব প্রতিবেদক*
নরসিংদী প্রতিদিন,রবিবার,১৯ আগস্ট ২০১৮:
নরসিংদীর রায়পুরায় ৭ বছরের ছেলে হত্যা মামলার বাদি সুজন মিয়াকে ৭ দিনের মধ্যে আপোষ করতে আলটিমেটাম দিয়েছে আসামিপক্ষের স্বজনরা। তানাহলে ছোট ছেলে মামুনকে দুদিন অভুক্ত রেখে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তারচেয়ে বেশি নৃশংসভাবে বাদির বড় ছেলে সিয়ামকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সুজন মিয়া রায়পুরা থানায় একটি সাধারন ডায়েরি দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রায়পুরা উপজেলার হাসিমপুর এলাকার প্রবাস ফেরত সুজন মিয়ার ছোট ছেলে মামুন মিয়া। গত ২০ জুন বিকেলে বাড়ির সামনে সড়কে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। তিন দিন পর ২৩ জুন দুপুর দেড়টার দিকে পাশের বাড়ির জয়নাল মাষ্টারের বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় গামছা গলায় পেঁচানো লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সুজন মিয়া বাদি হয়ে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তভার থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করলে এসআই আবদুল গাফফার পিপিএম তদন্ত শুরু করেন। এ ঘটনায় প্রথমে হত্যার সন্দেহে প্রযুক্তির সহায়তায় জয়নাল মাষ্টার ও পার্শ্ববর্তী রাজনগর এলাকার নাসির মিয়াকে আটক করা হয়। পরে নাসির মিয়ার স্বীকারোক্তিতেই বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই আবদুল গাফফার নরিসংদী প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযুক্ত জয়নাল মাষ্টার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারি। সে মূলত কোন এজেন্সির হয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করে। নিহত মামুনের বাবা সুজন মিয়াকে জয়নাল মাষ্টারই সৌদি আরবে পাঠিয়েছিল। এমনকি সুজন মিয়াও বিদেশ থেকে সকল টাকা পয়সা সুজন মিয়ার মাধ্যমেই দেশে পাঠিয়েছে। সুজন মিয়া দেশে ফিরে সকল টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করে রাখে। সেই টাকার লোভেই নিজের ছেলে আরমান শরীফ ও নাতী নরসিংদী মডেল কলেজের শিক্ষার্থী জিদান ও লিমনকে দিয়ে নাসিরকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করে অপরহরন করা হয় শিশু মামুনকে। নাসিরের মাধ্যমে সুজনের ফোনে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। পাশাপাশি কেউ ফোন করেছে কিনা- ফোন বন্ধ কেন এমন তথ্য সুজন মিয়ার কাছ থেকে খোজখবর নেন জয়নাল। টাকা না পেয়ে জয়নাল মাষ্টারের পরিকল্পনামাফিক শিশু মামুনকে দুদিন অভুক্ত রেখে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে নাসির, লিমন, জিদান ও আরমান শরীফ। পরে পরিকল্পনামাফিক নিজের বাড়ির ছাদে লাশ এনে ফেলে রাখেন জয়নাল। যাতে কেউ তাকে সন্দেহ করতে না পারে। পরে হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জয়নাল মাষ্টার, আরমান শরীফ, জিদান, শিপন ও জিদনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ হত্যায় জড়িত একমাত্র লিমন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।’
এ ঘটনায় সর্বশেষ জয়নাল মাষ্টারের নাতি জিদানকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর মা নাহিদা, বাবা অহিদুজ্জামান, অভিযুক্ত লিমনের বাবা ফারুক ও মা লাভলী ও ফজলু নামের আরেক স্বজনসহ অজ্ঞাত কয়েকজন সন্ত্রাসী মামলার বাদি সুজন মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ স্বজনকে আপোষ করতে হুমকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে তাঁরা মামলার বাদি সুজনের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় যে, আগামি ৭ দিনের মধ্যে হত্যা মামলাটি তুলে নিতে। তানাহালে প্রথমে ছোট ছেলের মত বড় ছেলে সিয়ামকে আরোও নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে। পরে বাড়িঘর জ্বালিয়ে সবাইকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। যাতে কেউ মামলা করতে না পারে। এঘটনায় গত শনিবার রাতে প্রাণভয়ে সুজন মিয়া রায়পুরা থানায় আলটিমেটামের বিষয়টি উল্লেখ করে ৫ জন নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামি করে একটি সাধারন ডায়েরি দায়ের করেন।
সুজন মিয়া নরিসংদী প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা আমার নাবালক শিশু ছেলেটিকে টাকার জন্য হত্যা করছে, এখন মামলা তুলে নিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে আমারদেরকে মারার হুমকি দিয়ে গেছে। এখন প্রাণভয়ে এলাকা যেতে পারছি না।’
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাতে সুজন মিয়া বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারন ডায়েরি দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।’