খন্দকার শাহিন, নরসিংদী প্রতিদিন,শনিবার, ২৫ আগস্ট ২০১৮: মালোয়শিয়ায় পাইপ লাইনের কাজ করতে গিয়ে মাটিচাপা পরে মোহাম্মদ মুনজুর আলী (৩২) নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় বিকাল তিনটায় কুয়ালালামপুর সুবাং শহরে এদুর্ঘটনা ঘটে। নিহত প্রবাসী নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের শিবারকান্দা গ্রামের মোহর আলীর ছেলে।শনিবার দুপুরে সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দালালের ক্ষপ্পরে পরে সাড়ে তিন বছর আগে চোখে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে রাতের আধারে পরিবারকে না বলে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছিল মুনজুর আলী। পরে বাড়ির জমিজামা বিক্রি ও মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার-দেনা করে দীর্ঘদিন কষ্ট করার পর, ১০ দশ দিন আগে বৈধ্য আই কার্ড নিয়ে চাকরি শুরু করে মুনজুর আলী। কিন্তু পরিবারের ভাগ্যের চাকা ফেরানো স্বপ্ন তার সাথেই মাটি চাপা পরে গেল। পরিবারের হাসি দেখতে মুনজুর দেশে ফিরতে পারলেন না, বরং চলে গেলেন না ফেরার দেশে।নিহত মুনজুরের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে মুনজুর সবার বড়। পরিবারের হাল ধরতে কাউকে কিছু না বলে বিদেশে চলে যান। পরে এক দালালের মাধ্যমে বাড়ি থেকে টাকা দিয়ে তাকে মালেশিয়ায় কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়। তার ধার-দেনা এখনো পরিশোধ করতে পারেনি। তাদের বাবাও স্বাভাকি চলাফেরা করতে পারে না। এর এক বছর আগে তার মেজো ভাই হযরত সোনার গাঁওয়ের মদনপুরে সেনাবাহীনির গাড়ির ধাক্কায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এ শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার বড় ভাই মালয়েশিয়ায় মাটিচাপা পরে মারা যায়। অল্প বয়সেই দুই ভাইকে হারাতে হলো। তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে, মুনজুরের দেহটি যেন সরকার দেশে দ্রুত পাঠিয়ে দেয় এই আহবান জানান তিনি।
কাঁঠালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হারুন অর-রশিদ জানান, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম মুনজুরের এক মেয়ে ও দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে মালয়েশিয়া পারি জমালেও, তার আগেই নির্মম মৃত্যু হয় তার। তার লাশটি দেশে আনার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিত করা করা হবে বলে নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান তিনি। সেই সাথে তার বৈধতা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।মালয়েশিয়া থেকে মুঠোফোনের নিহত মুনজুরের চাচাতো ভাই নুর মোহাম্মদ নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, সুবাংজায়া কোম্পানির প্রজেক্টে কর্মরত অবস্থায় মাটিচাপায় তার মৃত্যু হয়। নিহত মুনজুরের লাশ সারডাং হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় শনি ও রবিবার সরকারি ছুটি থাকায় তার মৃতদেহ পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আইনি ও আনুসাঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী সোমবার (২৭ আগস্ট) মুনজুরের লাশ দেশে পাঠানো হতে পারে।এ ব্যাপারে হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দিন বন্ধ থাকার কারণে মিশনে কোনো তথ্য আসেনি। আসা মাত্রই নিহতের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে এবং যেহেতু মুনজুর আলী কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে হাইকমিশন এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।