নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,মঙ্গলবার,২৮ আগস্ট ২০১৮: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চর ধুকুন্দি গ্রামের গৃহবধু পারভীনের মৃত্যুর ৭দিন পেরিয়ে গেলেও উদঘাটন হয়নি মৃত্যুর রহস্য। পারভীনের স্বামীর বাড়ীর লোকজন এটিকে বিষপানে আত্মহত্যা বলে দাবী করলেও পারভীনের বাবার বাড়ির স্বজনদের অভিযোগ হত্যা। স্বামী ও বিয়ের উকিল কর্তৃক ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর পালিয়েছে পাষন্ড স্বামী মোশারফ সহ তার পরিবারের লোকজন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ বিবাহের ৪ মাস না পেরোতেই স্বামীর বাড়ীর লোকজন পারভিনকে হত্যা করেছে।
জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের চর মরজাল গ্রামের সফর আলীর কন্যা পারভীনের বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের চর ধুকুন্দি গ্রামের মোশারফের সাথে। বিয়ের প্রথম দিকে সুখে শান্তিতে থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে নানা অজুহাতে পারভীনের উপর চলে অত্যাচার নির্যাতন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মোশারফের বড় দুই ভাইয়ের স্ত্রীও এ বাড়ীতে অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়েই সংসার জীবন অতিবাহিত করছে। পারভীন ছিল কিছুটা প্রতিবাদী। তাই পারভীনের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালালে সে প্রতিবাদ করতো।
এ কারণে তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে স্বামী মোশারফ ও শ্বাশুরী হাসেনা সহ পরিবারের লোকজন। কিন্তু পারভীন সংসার ছেড়ে চলে আসতে রাজি হয়নি। তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মোশারফ ও তার পরিবারের লোকজন। এলাকার লোকজন জানান তাকে একটি ঘরে তিন দিন তালাবদ্ধ করে রেখে তার মুখ থেকে জবানবন্ধী নেয়া হয় ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’।
এরপর গত ২০ আগষ্ট পারভীনের বিষ পানে মৃত্যু হয়। গুরুতর অবস্থায় নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে পারভীন আত্মহত্যা করেছে বলে পারভীনের পিতা মাতাকে জানানো হয়। পারভীনের সহজ সরল পিতা সফর আলী হাসপাতালে উপস্থিত হলে স্বামী মোশারফ এবং বিয়ের উকিল দু’জনে সফর আলীকে বলেন আপনার মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এখন ময়নাতদন্ত হলে আপনার মেয়ের লাশ কাটা হবে। তাই এত সব ঝামেলা না করে এই কাগজে একটা স্বাক্ষর দেন যাতে লাশ আমরা ময়নাতদন্ত ছাড়া নিয়ে যেতে পারি। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সফর আলীর কাছ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের আবেদনে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এসময় সফর আলীর সাথে আসা স্বজনদের সন্দেহ হয় এবং সেই আবেদনটি মোশারফের হাত থেকে নিয়ে যায় সফর আলীর সাথের লোকজন। এরপর পালিয়ে যায় মোশারফ ও তার বাড়ীর লোকজন।
পরে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ নরসিংদী জেলা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় রায়পুরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পরিবার এ বিষয়ে রায়পুরা প্রেস ক্লাবে এসে ঘটনার বর্ণনা জানালে রায়পুরা প্রেস ক্লাবের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। কিন্তু মোশারফের পরিবারের লোকজন বাড়ীতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার ওসি মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছি না। রিপোর্ট হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে।
খবর: আজকের নরসিংদী