নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন, সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ক্যান্সার শনাক্তের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন। আরও যা অবাক ব্যাপার তা হলো, এরা কোন চিকিৎসক, জৈব রসায়নবিদ নন, বরং পদার্থবিজ্ঞানী, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন নারী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক। বুধবার রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উচ্চশিক্ষা মান উন্নয়ন প্রকল্প ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য জানানো হয় গণমাধ্যমে।
সবাই জানেন ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার একটি প্রায় দুরারোগ্য ব্যাধি, প্রাথমিক পর্যায়ে যা শনাক্তকরণ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। কিন্তু বাংলাদেশের বিজ্ঞানী দল উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি তথা যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র পাঁচ মিনিটেই জানা যাবে রোগীর শরীরে আদৌ ক্যান্সার আছে কিনা।
খরচ হবে খুব কম, অনধিক পাঁচশত টাকা। আগামি দেড় বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তির সুফল পাবে মানুষ সুলভ মূল্যে। ইতোমধ্যে তারা এই প্রযুক্তির মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দফতরে। গবেষক দলটি পদার্থ বিজ্ঞানের ‘নন লিনিয়ার অপটিক্যাল ধর্ম ব্যবহার করে রোগীর শরীরের তরল পদার্থের (রক্ত) মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি’ উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন। গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ে যেমন রক্তে শর্করার পরিমাণ শনাক্ত করা যায়, তেমনি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গবেষক দলের এই গবেষণাটি স্বীকৃতি পেলে এবং যন্ত্রটির মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত হলে নিঃসন্দেহে তা বাংলাদেশের জন্য আরও একটি গৌরব বয়ে আনবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা পাঁচটি নতুন জাতের ধানবীজ উদ্ভাবন করেছেন। বর্তমান বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত সীমিত বদ্বীপ ভূখন্ডে এটি একটি অভাবনীয় সাফল্য নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশ এখন ধান-চাল উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং কিছু পরিমাণ উদ্বৃত্ত চাল রফতানিও করে। আর এর প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও কৃষকদের। অনুরূপ লবণাক্তসহিষ্ণু মাটিতে ধানের চাষ করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব দেশের দক্ষিণাঞ্চল, সুন্দরবন উপকূল, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায়। এর পাশাপাশি ঝিনুক ও মুক্তা চাষও সম্ভব।
ধানের পরই বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী কৃষিপণ্য পাট। পাটের জেনোম তথা বংশগতির মানচিত্র উদ্ভাবন করে বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার দল তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পাটের মেধাস্বত্ব তথা প্যাটেন্ট রাইট সুরক্ষার জন্য আবেদনও করেছে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে। এই আবিষ্কার ও স্বত্বাধিকারের ফলে বাংলাদেশ উফশী ও উন্নত জাতের পাট উৎপাদনের পাশাপাশি অতি সূক্ষ্ম পাটতন্তু তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় একচ্ছত্র প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হতে পারে। তবে এর জন্য চাই পাট নিয়ে আরও উচ্চ ও উন্নততর নিরন্তর গবেষণা এবং এর সঠিক ব্যবহার। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মরত বিজ্ঞানীদের জন্য চাই আরও প্রণোদনা ও অনুপ্রেরণা।
এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাগারের বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার সুযোগ সীমিত এবং আর্থিক বরাদ্দও সীমাবদ্ধ। ফলে বাংলাদেশের প্রতিভাবান ও মেধাবী বিজ্ঞানীরা প্রায়ই উন্নত বেতন ও গবেষণার আকর্ষণে বাইরে চলে যান। তদুপরি গবেষণাগারে যেসব বিজ্ঞানী দিনরাত কাজ করেন, তাদের সৃজনশীল কাজটি ১০টা-৫টা নিয়মিত অফিসের মতো হলে চলে না। বরং নতুন কিছু একটা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এটা নিয়েই ভাবিত থাকতে হয়।
নিজের এবং সংসারের দিকেও মন দিলে চলে না তাদের। সেক্ষেত্রে ধান-পাট, মৎস্য-ঝিনুক গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতো সৃজনশীল গবেষণাগারে যারা কাজ করেন তাদের বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা-প্রণোদনা নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়কে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপনে বাড়াতে হবে আর্থিক বরাদ্দ।