নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮:
‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ এমন শ্লোগানকে সামনে রেখে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের দিকনির্দেশনা মূলক সভা ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের ভিশন অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সড়ক দুর্ঘটনারোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সাধারণ সদস্যদের করণীয়’ শীর্ষক সভায় সংগঠনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এসব কথা বলেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় বর্হিবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘যেখানে সারাবিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি লাখে ২-১ জন মারা যায়, সেখানে বাংলাদেশে মারা যায় ৬৭ জন।’ তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনা মানুষের দ্বারাই সৃষ্ট; এটা ভাগ্যের দ্বারা সৃষ্ট নয় যে কেউ বলবে যে, ‘আল্লার মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে!’ তিনি আরও বলেন, আমাদের সচেতন হলেই চলবে না। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন উন্নত করতে হবে, সেই সাথে ড্রাইভারদেরকেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজনৈতিক নেতাদের গতানুগতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নেতারা শুধু মানুষকে সচেতন হতে বলেন। কিন্তু কীভাবে মানুষ সচেতন হবে, সে বিষয়ে তারা পরিস্কার বলেন না। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সবার আগে তো গাড়ি চালানো জানতে হবে; তারপরেই তো সচেতন হয়ে চালকরা গাড়ি চালাবে। নিরাপদ সড়ক চাই চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সারা দেশে অদক্ষ ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। এমন অসংখ্য ড্রাইভার আছে যাদের কোনো ট্রেনিং নেই, যোগ্যতা নেই তাকে লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। এমন ড্রাইভারদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়। তাদের জন্য সড়কে মৃত্যু। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, ঢাকায় গণপরিবহনে যারা ড্রাইভার তারা জানেই না ড্রাইভিং আইন-কানুন। শুধু গাড়ি চালানো শিখেই সড়কে নেমে পড়ে। এদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়। রাজধানীর যত ড্রাইভার আছে সবাইকে ট্রেনিং ছাড়া কোনোভাবেই লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে সবাইকে। ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, এটা ঠিক যাত্রী বা পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। পুলিশ, ট্রাফিক, পথচারী, পরিবহনকর্মী সবাইকে আইন মানতে হবে সচেতন হতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের এই কর্ণধার জনসচেতনতার লক্ষ্যে বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশেই যাত্রীরা চালককে তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যাবার কথা বলেন না, বরং তারা সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেন। একমাত্র বাংলাদেশেই যাত্রীরা গাড়িতে উঠেই বলেন যে, তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও।’
সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব সৈয়দ এহসান-উল হক কামাল, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক লিটন এরশাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন প্রমুখ।
নিসচা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনা মুলক বক্তব্যে আরো বলেন, ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক চাই’কে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য সংগঠনের প্রত্যেক নেতাকে হতে হবে সৃজনশীল। এমন কাজ করা যাবে না যাতে অন্যের ক্ষতি হয়। সড়ককে নিরাপদ করতে যানবাহনের চালক, মালিক, পথচারী, যাত্রী সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে নতুন নতুন আইডিয়া সৃষ্টি করতে হবে। তিনি সকল নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন,আমি একা ইলিয়াস কাঞ্চন নই। আমার এ আন্দোলনে যারা কাজ করে আমি মনে করি তারা প্রত্যেক জন ইলিয়াস কাঞ্চন। আপনারা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিসচার কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে যথাযথ কার্যকর ভুমিকা পালন করবেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সড়ক দুর্ঘটনারোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সাধারণ সদস্যদের করণীয়’ শীর্ষক সভায় উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ তারা তাদের অভিজ্ঞাতা একে অপরের সাথে আলোচনা করেন এবং নিসচা চেয়ারম্যানের দেয়া দিকনির্দেশনা মেনে চলার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।