নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,শনিবার,১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮: যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চরম গোপনীয়তা রক্ষা করায় দারুণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে রাজনৈতিক সফরে এসে নেতা-কর্মীদের উপেক্ষার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তারা।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাধিক নেতা এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব যে দুটি কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন তা এখানকার নেতা-কর্মীদের জন্য ‘ডাল-ভাত’। এজন্য বাংলাদেশ থেকে আসার দরকার পড়ে না। বরং নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলে আরো অনেক বড় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারতেন মির্জা ফখরুল। কেন্দ্রীয় নেতাদের এ ধরণের কর্মকাণ্ডে দলের নেতা-কর্মীদের হতাশা আরো বেড়ে গেল।
জাতিসংঘ মহাসচিবের কথিত আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বুধবার নিউইয়র্কে যান। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন সহকারী মহাসচিব জেনকো মিরাস্লাভের সঙ্গে। ওইদিনই তিনি নিউইয়র্ক থেকে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। পরদিন শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেস্কের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে যান। স্থানীয় সময় শনিবার সকালে মির্জা ফখরুলের লন্ডনে পৌঁছার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সংক্ষিপ্ত সফরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গী ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর এবং ঢাকা থেকে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য তাবিথ আউয়াল। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে তার সফরসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কয়েকজন নেতা মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।
মির্জা ফখরুলের সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ জানান, এই সফরের বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। এর আগেও মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আমরা তাকে নিয়ে কর্মসূচিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তখনো নেতা-কর্মীদের তিনি এড়িয়ে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এটি হয়তো কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে দলের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েন। গিয়াস আহমেদ বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত। তারপরও নেতা-কর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। দলের মহাসচিবকে নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান করলে নেতা-কর্মীরা আরো চাঙ্গা হতেন। কিন্তু সর্বশেষ এই সফর নিয়ে দলের মধ্যে ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের ওয়াশিংটন ডিসি সফর প্রসঙ্গে সেখানে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু বলেন, আমাকে বা আমাদের এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। তবে শুনেছি শুক্রবার সকালে মহাসচিব পররাষ্ট্র দফতরে গিয়েছিলেন। সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছেন। কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এ বিষয়ে শরাফত হোসেন বাবু কিছু জানাতে পারেন নি।
নতুন লবিং ফার্ম নিয়োগ প্রসঙ্গে শরাফত বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লবিং ফার্ম নিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ একটি ব্যাপার। নতুন নিয়োগ প্রসঙ্গে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে পুরনো লবিং ফার্ম বিএনপির কাছে বিপুল অর্থ পাবে। সেই অর্থ এখনো পরিশোধ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
মির্জা ফখরুলের সফরে নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করার বিষয়ে শরাফত হোসেন বাবু বলেন, এটা দলের হাইকমান্ডের ব্যাপার হতে পারে। তবে নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে পারলে এই সফর আরো সফল হতে পারতো। তিনি বলেন, আমাদের অনেকের সঙ্গে জাতিসংঘ ও পররাষ্ট্র দফতরে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। আমরা নিজেরাও অনেকবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ ও পররাষ্ট্র দফতরে গিয়েছি। মহাসচিবের এই কর্মসূচি আরো বড়ভাবে হতে পারতো।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে চরমভাবে উপেক্ষিত। যুক্তরাজ্যে কমিটি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে কমিটি থাকা তো দূরের কথা, ৫ বছর আগে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে দলের কর্মকাণ্ড নিষ্ক্রিয়।
এ প্রসঙ্গে ওই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও একই সময়ে কারাগারে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগও অভিন্ন আন্দোলন করেছিল। এ কারণে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে দলের নেতা-কর্মীদের বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেন। অথচ বিএনপির কমিটি না দিয়ে বরং তা বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে।