স্পোর্টস ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,রবিবার,১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮: বাংলাদেশকে দেখা গেল। ত্যাগ ও সাহসী পদক্ষেপে পূর্ণ ছিল ম্যাচটি। কব্জির চোট নিয়ে ফের ক্রিজে আসা তামিমের ত্যাগ, একপ্রান্তে একাই লড়ে যাওয়া মুশফিকের সাহসী ব্যাটিং, আর মাশরাফির নেতৃত্বে অসাধারণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আজ শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই জয় দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এবং ঘরে-বাইরে মিলিয়েও টাইগারদের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় এটি।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৪৯.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৬১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে মাত্র ৩৫.২ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
জয়ের জন্য খেলতে নেমে উঠে দাঁড়াতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। মোস্তাফিজুর রহমান উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ম্যাথুসরা। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে কুশল মেন্ডিসকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। প্রথম বলেই বিদায় নেন লঙ্কান ওপেনার। পরের ওভারে মাশরাফি বোল্ড করেন উপুল থারাঙ্গাকে (২৭)। বাংলাদেশের অধিনায়ক তার পরের ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও মাঠ ছাড়া করেন।
প্রথম পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজ তুলে নেন শ্রীলঙ্কার চতুর্থ উইকেট। কুশল পেরেরাকে ১১ রানে এলবিডাব্লিউ করেন বাংলাদেশি স্পিনার। ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর শানাকাকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন ম্যাথুস। কিন্তু অধিনায়কের ভুল বোঝাবুঝিতে নন স্ট্রাইকে ফিরতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের থ্রোতে মিরাজ রান আউট করেন শানাকাকে (৭)।
পরের ওভারে ইনিংসে প্রথম বল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় বলেই ম্যাথুসকে ১৬ রানে এলবিডাব্লিউ করেন রুবেল। মিরাজের পরের ওভারে পয়েন্টে রুবেল ধরেন থিসারা পেরেরার ক্যাচ। মুস্তাফিজ তার চতুর্থ ওভারে সুরাঙ্গা লাকমলকে ২০ রানে বোল্ড করেছেন। লাসিথ মালিঙ্গাকে নিয়ে বাংলাদেশের এই উইকেট উৎসবে কিছুটা বিরতি টেনেছিলেন দিলরুয়ান পেরেরা। তবে মোসাদ্দেক হোসেন তার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে তাকে ২৯ রানে লিটন দাসের ক্যাচ বানান। পরের ওভারে আমিলা আপোনসোকে বদলি ফিল্ডার নাজমুলের ক্যাচ বানান সাকিব। বাংলাদেশি অলরাউন্ডার তার একমাত্র উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয় উৎসবে মাতান।
দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও মিরাজ।
এরআগে খেলতে নেমে শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর তামিম কব্জিতে ব্যথা পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যান। স্কোর বোর্ডে বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ৩। চাপে পড়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মুশফিক-মিঠুন।
তাদের ব্যাটে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয় বাংলাদেশ। মালিঙ্গার শিকার হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে মিঠুন দারুণ এক ফিফটি করেন। তিনি ৬৮ বলে দুই ছক্কা এবং পাঁচ চারে ৬৩ রান করেন। তাদের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ড একশ’ পেরোয়।
মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ১৩১ রানের এই জুটি ভেঙে ফের আঘাত হানেন মালিঙ্গা। নতুন নেমে মাহমুদউল্লাহও সাজঘরে ফিরেছেন ১ রানে। এরপর ক্রিজে আসেন মেহেদি হাসান।
মেহেদী হাসানকে সঙ্গে নিয়ে মুশফিক বেশ কিছুক্ষণ সামাল দেন ইনিংস। ১৫ রান তুলে ফেলা মিরাজকে ফিরতি বলে ক্যাচ আউট করেন লাকমল। এরপর খেলতে নামেন রুবেল হোসেন। ১২ বলে ২ রান করে সিলভার এলবিডব্লিউয়ের শিকার করে সাজঘরে ফিরেন।
রুবেল আউট হয়ে গেলে মাঠে নামেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ইতোমধ্যে দারুন এক সেঞ্চুরি উপহার দেন অপরপ্রান্তে একাই লড়ে যাওয়া মুশফিকুর রহিম। মুস্তাফিজ ১১ বলে ১০ রান করে মেন্ডিসের চমৎকার থ্রুতে রানআউট হন। এরপর ক্রিজে আসেন কব্জিতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া তামিম ইকবাল।
তিনি ৪ বলে ২ রান করে নটআউট থাকেন। মুশফিক ১৫০ বলে ১৪৪ রানে থেসেরা পেরার শিকার হন। ১৪৪ রানের মধ্যে তিনি ১১টি চার এবং চারটি ছক্কা হাঁকান। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৩ ওভার শেষে সব উইকেট হারিয়ে ২৬১ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।