নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,সোমবার,১৭ সেপ্টম্বর ২০১৮: চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনকে হত্যা করা হয়নি বরং তিনি আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।
দীর্ঘ তদন্তের পর রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আদালতে এমনই এক প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তাতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী তাসফিয়ার মৃত্যু আত্মহত্যাতেই হয়েছে, তাকে হত্যা করেনি কেউ। এই মর্মেই রবিবার দুপুরে এই প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তাসফিয়ার শরীরে কোনো বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব মেলেনি। পাওয়া যায়নি ধর্ষণের কোনো আলামতও। পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হওয়ায় শ্বাসনালীতে কাঁদামাটি পাওয়া গেছে। যে ক’জন সাক্ষীর বক্তব্য নেয়া হয়েছে সবাই আত্মহত্যা বলেই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এরআগে চলতি বছরের ২ মে নগরীর পতেঙ্গা সৈকত এলাকা থেকে শানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের লাশ উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত হিসেবে।
পরে ওইদিন দুপুরের দিকে কন্যার লাশ পতেঙ্গা থানায় গিয়ে শনাক্ত করেন তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন। এ ঘটনায় মোহাম্মদ আমিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কথিত প্রেমিক আদনান মির্জাসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলা অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ছয়-সাত জনকে।
আদালতে জমা দেয়া ওই চূড়ান্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ৭ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর বক্তব্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত রিপোর্টের উপর নির্ভর করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে আদালতে দায়ের করা হয়েছে।
২ মে সকালে তাসফিয়ার লাশ নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে পাথরের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার রাতে তাকে পতেঙ্গা সৈকতের ১৮ নম্বর ঘাটে দেখে কিছু লোক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবির উপ-পরিদর্শক স্বপন সরকার এ বিষয়ে বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্টে তাসফিয়ার শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, ধর্ষণের আলামতও মেলেনি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তার শ্বাসনালীতে কাঁদামাটি পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ধারণা, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কারণে কাঁদামাটি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করেছে।’
তিনি জানান, এছাড়াও এই মামলার সব আসামি কারাগারে আছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সবার স্বীকারোক্তিতেও হত্যার কোনো প্রমাণ মিলেনি। এতেই বুঝা যাচ্ছে এটি হত্যা নয়! আত্মহত্যা!
ডিবির এই তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১ মে সন্ধ্যায় সৈকতে ঘুরতে যাওয়া মো. খুদরুত ই ইলাহী, আশিকুর ইসলাম, এম এ খান আন্না, আবু তাহের, নুরুল আবছার, নুর হোসেন, বোট মাঝি লোকমান হোসেন, তৈল ব্যবসায়ী হারুণ, কৃষক মো. হোসেন ও চা দোকানদার মো. মনছুরকে। এ সাক্ষীর তালিকায় মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হযেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সকল কিছু পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তাসফিয়া আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাই তার মৃত্যুর কারণ।’
মামলায় তাসফিয়ার কথিত প্রেমিক আদনান মির্জা ও আসিফ মিজান, যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজ কারাগারে আছে। মামলা দায়েরের শুরু থেকেই তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন সিএমপির পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন। ওই সময় থেকে এই ঘটনায় ছায়া তদন্তকারী হিসেবে কাজ করছে র্যাব, সিআইডি ও পিবিআই।
তবে তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ নির্ণয় না হওয়ায় অন্ধকারে ঘোরপাক খাচ্ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর মামলাটি তদন্ত করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
গত ২৯ জুলাই তাসফিয়ার প্রেমিক আদনানকে আদালত প্রাঙ্গণে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরআগে আদালতে আদনানের রিমান্ড শুনানির পর আদালত প্রাঙ্গণে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় চট্টগ্রামের নারী ও শিশু আদালতের (পঞ্চম) বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস। তবে কোনো ক্লু মেলেনি।
১ মে নগরের গোলপাগাড় মোড় চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন তাসফিয়া। এরপর সেই অটোরিকশাটি জিইসিমোড় হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এর পরের দিন মিলে তার লাশ।