খন্দকার শাহিন*
নরসিংদী প্রতিদিন,বৃহস্পতিবার,২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮:
নরসিংদীতে পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের জয়নগর এলাকায় অবস্থিত শত বছরের পুরনো জমিদার বাড়িটি আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিপুণ কারুকাজ মণ্ডিত বাড়িটি নির্মাণ করেন মোগল আমলের লক্ষণ সাহা নামে এক জমিদার। পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক ২৪ কক্ষ বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়িটির পাশেই রয়েছে ছোট্ট আরেকটি কারুকার্য খচিত মন্দির, রয়েছে একটি অর্ধনির্মিত প্রাচীন বাড়ি।
বাড়ির পেছনে রয়েছে গাছ-গাছালি যুক্ত বাগান। বাড়িসহ বাগানের চারিদিকটা উচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। রয়েছে সেই সময়ই তৈরি করা জমিদার বাড়ির সুন্দর একটি পুকুর আর সান বাঁধানো ঘাট। তালগাছের বষ্টেুনিতে পুকুরের পাশে পূজা করার জন্যে রয়েছে একটি বড় আকারের মন্ডপ। বিশাল আকৃতির এই জমিদার বাড়িটি সরকারী অর্থে সংস্কার অতি জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন ও পর্যটন পিয়াসুরা। এত পর্যটনের নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠবে পলাশের এ জমিদার বাড়ি।
বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার পর জমিদার লক্ষণ সাহার নাতি বৌদ্ধ নারায়ণ সাহা জমিদারের রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তি আহম্মদ আলীর কাছে বিক্রি করে নারায়ণগঞ্জ জেলায় চলে যান। আহম্মদ আলীর স্ত্রীর নাম অনুসারে বাড়িটির নামকরণ করেন জামিনা মহল। মূলত আহম্মদ আলী ওকালতি পেশার সাথে সংযুক্ত ছিলেন বিধায় বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি উকিলের বাড়ি হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে আহাম্মদ আলীও নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করছেন। আর এই জমিদার বাড়ি পরিচর্যায় রয়েছেন গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজে নিয়োজিত থাকা মৃত. শরাফত আলীর বড় ছেলে হোসেন আলী।
হোসেন আলী নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, এ জমিদার মালিক আহম্মদ আলী নামে এক উকিল। যার কারণে এই বাড়িটি এখন উকিলের বাড়ি নামে পরিচিত। তিনি আরো জানান, স্বাধীনতার পর থেকে ভিটামাটি হারিয়ে এখন ৫ হাজার টাকা বেতনে এ পুরনো জমিদার বাড়ীর দেখভাল করে আসছেন। তিনি দর্শনার্তীদের জন্য এ বাড়ির সামনে একটি ভ্যানে বসে আচারসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করেন।
তবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ, জমিদারের রেখে যাওয়া এই বিশাল সম্পত্তিটি ছিল দেবোত্তর।
এদিকে স্থানীয় এক প্রবীণ জানান, ‘তত্কালীন ভারতবর্ষে এই এলাকাটি ছিল দেবোত্তর হিসেবে। ঐ সময়ে দেবোত্তর জমি হলে জমিদারকে খাজনা দেওয়া লাগতো না। জমিদার লক্ষণ সাহার ছিল তিন ছেলে নিকুঞ্জ সাহা, পেরিমোহন সাহা ও বঙ্কু সাহা। জমিদার মারা যাওয়ার পর তারা তিন ভাই এই সম্পত্তি দেখভাল করতেন। বঙ্কু সাহা ভারত ভাগের সময় এখান থেকে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হওয়ার কিছু পূর্বে নিকুঞ্জ সাহাও ভারতে চলে যান। এক পর্যায়ে জমিদারের ছোট ছেলে পেরিমোহন সাহা এই সম্পত্তির দেখভাল করেন। পেরিমোহন সাহার বৌদ্ধ নারায়ণ সাহা নামে এক ছেলে ছিল। পেরিমোহন সাহা মারা যাওয়ার পর বৌদ্ধ নারায়ণ এই দেবোত্তার সম্পত্তিটি বিক্রি করে ফেলেন।’
তিনি আরো জানান, ‘এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় ট্রাস্ট নামে একটি সংগঠন দেবোত্তরকৃত এই সম্পত্তিটি বিক্রি করার পর আদালতে মামলা দায়ের করে। যা এখনো চলমান।’
এ প্রসঙ্গে ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই সাবের নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, ‘প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি ডাঙ্গা ইউনিয়নের ঐতিহ্য। এটি সংরক্ষণ ও দর্শনীয় স্থান করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইনজীবি আহম্মদ আলী এ জমিদার বাড়ির মালিক দাবি করে আসছেন। তার মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় সংস্কার কাজ ঝিমিয়ে পড়েছে।’