নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,সোমবার,১৫ অক্টোবর ২০১৮:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
তিনি বলেন, এ আইন বলবৎ থাকলে প্রেস মিডিয়া, টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়াসহ কেউই আমরা স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারব না।
সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে দ্য ডেইলি স্টারের এই সম্পাদক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পাস হওয়ার আগ থেকেই এ আইনটি নিয়ে, এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলাম।
‘আমরা মনে করি এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নই। আমরা এই আইনটির বিশেষ কতগুলো ধারার সংশোধন দাবি করছি।’
তিনি বলেন, বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার আইন। আমরা চাই আগামী সংসদ অধিবেশনে এই আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হোক।
এসময় তিনি সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।
২। এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে।
৩।পুলিশ বা অন্য কোনও সংস্থার মাধ্যমে কোনও সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদেরকে শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে। কিন্তু কোনও কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে, কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।
৪। কোনও সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোন কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের মাধ্যমে আগাম নির্দেশ নিতে হবে।
৫। সংবাদমাধ্যমে পেশাজীবী সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনও অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক কিংবা গ্রেফতার করা যাবে না।
৬। সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথচাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
৭। এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা আবশ্যক।
সাত দফা দাবি ঘোষণার পর সম্পাদকরা ১০ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
মানববন্ধনে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জামান, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।