নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮:
নাম জিজ্ঞেস করতেই হাত দিয়ে ইশারা করে খেতে চাইল ৭৫ এর কাছাকাছি বয়সী রোগাক্রান্ত প্রবীণ এই নারী। রাতে কিছু খেয়েছে কিনা জানি না। তবে হাতের ইশারা দিয়ে বোঝাতে চায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কিছুই খাওয়া হয়নি তার । প্রবীণ এই নারী শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভালভাবে কথা বলতে পারেনা। হাতের ইশারায় সব কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। জানি না কার মা কে রেখে গেছে, আর কে তাকে খাওয়াবে! নাম পরিচয় ভালোভাবে বলতে পারে না এমনি এক হতভাগ্য প্রবীণ নারীর অবশেষে ঠাই হলো মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাটের পুরাতন ট্রাক টার্মিনালের পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায়।
ছানি পড়ায় চোখে কম দেখে, মুখে ঘা, জ্বরসহ শরীরে নানা সমস্যা নিয়ে টার্মিনালে ঘরের বারান্দায় সাতদিন ধরে শুয়ে আছে প্রবীণ এই নারী। কোথায় তার বাড়ি-ঘর, কোথায় তার ছেলে-মেয়ে, কোথায় তার স্বজন, কেবা রাখে তার খবর? মানুষের দেয়া মশারির মধ্যে শুয়ে থাকা এই নারীর সাথে কথা বলতে যায় এ প্রতিনিধি। সে কথা বলতে চায়, কিন্ত দুর্বলতার কারণে তার মুখ দিয়ে বলা কথার শব্দ শোনা যায়না। তাই বোঝা যায় না তার কথা।
স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ আগে কে বা কারা আরিচা পুরাতন ট্রাক টার্মিনালের দক্ষিণ পাশের ঘরের বারান্দায় ফেলে রেখে যায় এই প্রবীণকে। হাঁটার কোনো শক্তি নেই যেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারতেন সেখানেই থাকতেন তিনি। কেউ না কেউ তাকে এখানে রেখে গেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
এমতাবস্থায় নিহালপুর গ্রামের জবেদা বেগম নামের অপর এক নারীর মায়া হলে তিনি ওই প্রবীণকে রিকশায় করে টার্মিনালের উত্তর পাশের ঘরের বারান্দায় নিয়ে যান। তাদের সাধ্য অনুযায়ী সেবা করছেন। একটি মশারি কিনে দিয়েছেন স্থানীয় একজন। কেউ দিলে তার ভাগ্যে খাবার জোটে, না দিলে না খেয়ে থাকতে হয় তাকে। তাও আবার একা হাত দিয়ে খেতে পারে না। দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে ওই প্রবীণ নারী। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে আরো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন তিনি।
আরিচা পুরাতন ট্রাক টার্মিনালের সুইপার আব্দুর রহমান বলেন, ‘৭দিন আগে টার্মিনালে এসে ওই প্রবীণ নারীকে ঘিরে লোকজনের ভিড় দেখতে পাই। কে বা কারা তাকে এখানে রেখে গেছে বলতে পারি না। আমি দু’দিন খাবারও দিয়েছি তাকে। তখন তিনি একটু একটু কথা বলতে পারতো। কিন্ত হাঁটতে পারতো না। তার নাকি ছেলে-মেয়ে সবই আছে।’
নিহালপুর গ্রামের জবেদা বেগম জানান, ‘কয়েকদিন আগে টার্মিনালের দক্ষিণ পাশের ঘরের বারান্দায় যেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারতেন সেখানেই শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। এমতাবস্থায় তাকে দেখ-ভাল করার জন্য রিকশায় করে টার্মিনালের উত্তর পাশের ঘরের বারান্দায় নিয়ে আসি আমি। ওই ঘরটি আমার বাড়ির কাছে। তাকে গোসল করিয়ে পোশাক পরিয়ে এখানে রাখা হয়। কাঁথা-বালিশের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।’
একই গ্রামের সুলতানা বেগম বলেন, আমি ওই প্রবীণের কাছ থেকে শুনেছি তার ১ ছেলে, নাম মসুর আলী, স্বামীর নাম মকছেদ আলী, বাড়ি শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ গ্রামে। কে তাকে এখানে রেখে গেছে জিজ্ঞেস করলে একবার ছেলের কথা বলে, আবার বলে আমার কপাল। কোনো কিছুই ভালভাবে বলতে পারেনা সে। বর্তমানে সে অসুস্থ্য তাকে চিকিৎসা করানো দরকার। আমরা গরিব মানুষ, যা খাই, তা নয় দিলাম। কিন্ত চিকিৎসা করাবো কিভাবে? তাকে চিকিৎসা এবং সহযোগীতা করার জন্য সংশ্লিষ্টসহ সমাজের হৃদয়বান ব্যাক্তিদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, যদিও নিহালপুর এলাকাটি তার এলাকার মধ্যে নয়। তারপরও মানবিক কারণে তার সাধ্য আনুযায়ী ওই প্রবীণকে সহযোগীতার করার আশ্বাস দেন তিনি।