নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,শনিবার,২০ অক্টোবর ২০১৮:
নাম তার কামাল উদ্দিন। বাবা সাইফুদ্দিন আহম্মেদ ওরফে সাফু পাইকার। গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। স্থানীয় বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে টেনেটুনে এসএসসি পাস করেন। আর পড়াশোনা করেননি। কাজ নেন একটি ক্লিনিকের টি-বয় হিসেবে। তবে এখন তিনি পরিচিত ‘কামাল ডাক্তার’ হিসেবে। নিজেকে এমবিবিএস পাস ডাক্তার বলে দাবি করেন। সেখানেই শেষ নয়, বনে গেছেন অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কয়েকটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করেন তিনি। বেশ কিছু বেসরকারি ক্লিনিকে তার মালিকানাও রয়েছে। ভুয়া ডাক্তার কামাল এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।
জানতে চাইলে রূঢ় কণ্ঠে বলেন, কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। ২০০২ সালে টি-বয় হিসেবে কামাল যোগ দেন জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌরসভার আল-হেরা ক্লিনিকে। অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য তার চাকরি চলে যায়। পরে আল-হেরা ক্লিনিককে পুঁজি করে বড় ভাইয়ের কর্মক্ষেত্র নাচোল উপজেলা সদরে গিয়ে ওষুধের দোকানে কাজ নেন। সেই ফার্মেসিতে থাকাকালীন সেখানে বনে যান ডাক্তার কামাল। শুরু হয় তার ভুয়া ডাক্তারির তেলেসমাতি। গোমস্তাপুর, নাচোল, শিবগঞ্জ, ভোলাহাটসহ পাশের জেলা নওগাঁর বিভিন্ন ক্লিনিকে অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, সব কিছু জেনেশুনেও চোখ বন্ধ করে আছে প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোমস্তাপুর উপজেলার তিনটি ক্লিনিকে ডাক্তার কামালের অংশীদারিত্ব রয়েছে। এগুলো হলো আল-মদিনা ক্লিনিক (রহনপুর), ডক্টর ক্লিনিক (চৌডালা) ও জনসেবা ক্লিনিক (বোয়ালিয়া)। নাচোলের মুক্তি ক্লিনিক ও শিবগঞ্জের খাসেরহাটের একটি ক্লিনিকেও তার মালিকানা রয়েছে।
ভুয়া ডাক্তার কামাল নওগাঁ নিয়ামতপুর উপজেলার একটি ক্লিনিকেও অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি ডাক্তার হিসেবে কাজ করেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় রোগীর জীবন বিপন্ন করে অবৈধভাবে অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি করে চললেও ডাক্তার কামালকে কেউ কিছু বলার সাহস পান না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরাও তার বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান।
ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার কামাল গোমস্তাপুরের বোয়ালিয়া বাজারে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান বাড়ি তুলে ভাড়া দিয়েছেন জনসেবা নামে একটি ক্লিনিককে। তবে বোয়ালিয়ায় কামালের পৈতৃক বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, তার বাবা গরু-ছাগলের ব্যবসা করেন। কামাল ছাড়া চার ভাইয়ের কেউ-ই ভালো কিছু করেন না। এই পরিবারের সন্তান কামাল ভুয়া ডাক্তারি করে বনে গেছেন কোটিপতি। রোগীরা তাকে ‘স্যার’ বলে ডাকে।
বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সমকালকে বলেন, সে এসএসসি পাস করেছিল। আর পড়াশোনা করেনি। এমবিবিএস পাসের প্রশ্নই ওঠে না। তবে কামাল এখন সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভুয়া ডাক্তারি করে- একথা তিনি শুনেছেন।
এদিকে নাচোলের মুক্তি ক্লিনিকের নম্বরে ফোন করে এক রোগীকে কামাল স্যারকে দিয়ে সিজারের কথা বললে তাকে দ্রুত ক্লিনিকে নিয়ে আসতে বলেন ফোন রিসিভকারী ব্যক্তি। তবে তার নাম জানা যায়নি। ওই ব্যক্তি জানান, ডাক্তার কামাল এখন এক রোগীর সিজার ও আরেক রোগীর অস্ত্রোপচার করছেন। এর পরপরই রহনপুর আল-মদিনা ক্লিনিকের নম্বরে ফোন করে কামাল স্যারকে দিয়ে এক রোগীর সিজার করার কথা বললে ওই ক্লিনিকের ম্যানেজার আতাউর রহমান রোগীকে নিয়ে আসতে বলেন। কামাল স্যার আছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছেন এখানে। দ্রুত রোগী নিয়ে চলে আসেন।
এ বিষয়ে ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার কামালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা চাইতে চাইলে তিনি ফোন ধরে অসংলগ্ন কথাবার্তা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তার বিরুদ্ধে কয়েকবার পত্রিকায় খবর হয়েছে- বিষয়টি তুলতেই তিনি বলেন, কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না। গত ৬ অক্টোবর তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এসএসএম খাইরুল আতার্তুকের সঙ্গে দেখা করেছেন। সিভিল সার্জন তাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।
তবে সিভিল সার্জন খাইরুল আতার্তুক বলেন, তার সঙ্গে কামালের কখনও দেখা হয়নি। এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হয়েছে।
সূত্র: সমকাল