নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,০৯ নভেম্বর ২০১৮:
নরসিংদীতে ফজলুল করিম (৫৫) নামে এক বাবা তার দুই ছেলের রডের আঘাতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পৌর শহরের চৌয়ালা এলাকায় ছেলেরা রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই বাবার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও স্থানীয়রা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ঘাতক দুই ছেলে মাসুম মিয়া (২২) ও মামুন মিয়া (১৮)। তারা দুজনেই নেশাগ্রস্ত ছিল বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুম মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহতের পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত ফজলুল করিম পেশায় একজন মুদি দোকানি ছিলেন। তার তিনি মেয়ে (কমলা বেগম, মাসুমা বেগম, মিনা আক্তার) ও তিন ছেলে (মাসুম মিয়া, মামুন মিয়া ও মানজারুল ইসলাম)। এরমধ্যে মানজারুল মালয়েশিয়া প্রবাসী। ছয় বছর আগে ফজলুল করিমের প্রথম স্ত্রী রৌশন আরা মারা যাওয়ার পর চার বছর আগে স্বপ্না আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকেই বড় দুই ছেলে তাদের সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার দাবিতে বাবা ফজলুল করিমকে একাধিকবার পিটিয়ে আহত করেন। কিন্তু ছেলেরা নেশাসক্ত হওয়ায় তাদের সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করে না দিয়ে দৈনিক খরচের জন্য ২০০ টাকা করে দিতেন। পাশাপাশি অত্যাচার থেকে বাঁচতে একাধিকবার তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন বাবা ফজলুল করিম।
শুক্রবার ছোট মেয়ে মিনা আক্তারের প্রবাসী স্বামীকে আনতে ফজলুল করিম বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য বাসার সামনের সড়কে গেলে দুই ছেলে মাসুম ও মামুন তার কাছে টাকা দাবি করে। এ সময় তিনি পরে টাকা দেবেন জানালে মামুন রড দিয়ে বাবা ফজলুল করিমের মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শরীরে একাধিক আঘাত করে ছেলেরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই মামুন একটি মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেলেও মাসুমকে স্থানীয়রা আটক করে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে এবং মাসুমকে ধরে নিয়ে যায়।
নিহতের মেয়ে কমলা বেগম বলেন, ‘আমার বাবা ভাইদের সব সময় টাকা দিতো। তারপরও তারা নেশা খাওয়ার জন্য বাবাকে অনেক নির্যাতন করতো। আমি দুই ভাইয়ের ফাঁসি চাই।’
নিহতের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘মেয়েদের জামাতা ও ছেলেদের ইচ্ছাতেই আমাকে বিয়ে করে আনা হয়েছে। আমার সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ছেলে মাসুম ও মামুন সবসময় সম্পদ লিখে দেওয়ার জন্য তাদের বাবাকে নির্যাতন করতো। তিনি দুবার তাদের পুলিশে দিয়েছিলেন। আবার নিজেই ছাড়িয়ে এনেছিলেন। ছেলেদের দৈনিক ২০০ টাকা করে হাতখরচ দিতেন আমার স্বামী।’
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দুজ্জামান বলেন, ‘নিহতের লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের এক ছেলেকে আটক করা হয়েছে। ছেলেরা মূলত নেশাগ্রস্ত ছিল। তারা টাকা ও সম্পদ লিখে দেওয়ার জন্যই বাবাকে হত্যা করেছে বলে পরিবারের লোকজন জানান। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।