নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন-
বুধবার,১৯ ডিসেম্বর ২০১৮:
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমি উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আমি এ কথা বলছি। খুব সাহসী আপনারা, ধরেন আমাকে। আশ্চর্য, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে।’
বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও ৪৭তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ)।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তথাকথিত নির্বাচনে আপনারা যদি ৩০০ সিট চান, তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই। আপনারা আরও পাচঁ বছর থাকবেন এটাতো বলেই যাচ্ছেন। এভাবে চাওয়ার থেকে আমাদের কাছে বলেন। আমরা হাত তুলে মেনে নেই। এই ভাবে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্য গিয়ে ৩শ লোককে নির্বাচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কামাল বলেন, ‘আপনি তো বলেছেনই আরও পাঁচ বছর থাকতে চান। অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চান। এই পাঁচ বছরের পরে আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আরও পাচঁ বছর থাকতে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন। অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য সময় এভাবেই বৃদ্ধি করা যায় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। সবাই বলবে আরও পাঁচ বছর থেকে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করি এটা নিয়মে পরিণত হবে।’
ড. কামাল বলেন, ‘যদি মনে করা হয় মানবাধিকার সংবিধানে লেখা আছে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি বলবো চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে। এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে, আমি অবাক হচ্ছি এরা কোন আইনে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পুলিশের নাই।’
তিনি বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা কোন ক্ষমতার বলে শাসন করছেন সেটা আমরা পরে বুঝবো। এখন যেটা করছেন একদমই সংবিধান পরিপন্থী কাজ করছেন।’
কামাল বলেন, ‘আজকে আপনাকে সাহায্য করার জন্য বলে দিচ্ছি, এখনই অবিলম্বে পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এধরনের শাসন আমি কখনো দেখিনি। এটাকে যদি সুশাসন বলা হয় তাহলে মিথ্যা বলা হবে। আজকে কেউ যদি দাবি করে এদেশে সুশাসন আছে তাহলে আমি বলবো সে মিথ্যুক।’
‘যারা মনে করবে আমরা ক্ষমতা পেয়ে গেছি, মানবাধিকারের কথা মানতে হবে না। পুলিশকে এভাবে অপব্যবহার করতে থাকেন, বিশ্বাস করেন আমার কি হয় না? হয় সেটা না, আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে এবং পরকালে। এখানে যদি কোন কারনে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না ইনশাআল্লাহ, সেটা মনে রাইখেন।’
বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধান দেখে বুঝার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘সংবিধান শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংবিধান লঙ্ঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না। স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
‘ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করুক। স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তারা যেন ভোট দিতে পারেন। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকেরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহিতা করে পার পাওয়া যায়, তা ঠিক না। আজ হোক কাল হোক তার বিচার হবে।’
পুলিশকে অপব্যবহার বন্ধ করা আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন না করতে পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’
নির্বাচন কমিশনকে তার গুরু দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সব ক্ষমতা আপনাদের। জনগণের ভোটের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোনো সংবিধান পরিপন্থী কাজ করে এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন- বলেন পুলিশ সরান।’
‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দেশের জন্য এবং দেশের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনারা ক্ষমতা কাজে লাগান ইনশাআল্লাহ ভালো নির্বাচন হবে। উজ্জল ভবিষৎ সামনে দেখা যাচ্ছে। আর এটা না করলে নির্বাচনের ওপর কোনো আঘাত দেওয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূইয়া।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব) নূরুদ্দিন খান, সাবেক আইজিপি ড. এম এনামুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজুমল আহছান কলিমউল্লাহ প্রমুখ।