ডেস্ক রিপোর্ট | নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার,২৯ ডিসেম্বর ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এক দিন পরই ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রার্থীদের প্রচারণাও শেষ হয়েছে। ভোটাররা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় আছেন, কখন তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ১০ বছর পর এই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দল। তাই এ নির্বাচন নিয়ে দেশীয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৌতূহলের শেষ নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের নামকরা সংবাদপত্র বা সাময়িকীগুলোতে এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে।
টাইম ম্যাগাজিন
প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন টাইম এক প্রতিবেদনে আভাস দিয়েছে, রেকর্ড চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দুই মেয়াদে তার সরকারের ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের ফলে এবারের নির্বাচনেও ভোটাররা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবেন। টাইমের প্রতিবেদনে ভঙ্গুর গণতন্ত্রের বিনিময়ে বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক সফলতা নিয়ে শেখ হাসিনার সমালোচকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে…
দ্য গার্ডিয়ান
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে ভোট দেবেন নাগরিকরা। প্রতিবেদনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির অবস্থা উল্লেখ করে বিরোধীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশটির ৪৭ বছরের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর’ সময় পার হচ্ছে এখন।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট
ব্রিটেনের ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকায় সম্প্রতি একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এশিয়া এডিটর এডাম উইথনালের লেখা এই প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হচ্ছে বিরোধী দলের কর্মীদের জন্য এক ধরনের ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বাংলাদেশের এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের দিকে ঝুঁকেছে এবং কঠোরভাবে বিরোধীদের দমন করেছে, আবার অন্যদিকে বাংলাদেশ তার অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পুরো অঞ্চলে সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। চ্যাথাম হাউসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. গারেথ প্রাইসকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশে কোনো নির্ভরযোগ্য জরিপ হয়নি নির্বাচনের আগে, তাই বলা মুশকিল ভোটাররা যখন ভোট দিতে যাবে, তখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নাকি তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, কোনটিকে তারা বেশি গুরুত্ব দেবে। তিনি মনে করেন, যদি শেখ হাসিনা ভোটে জেতেন, যেটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে কিছু বিক্ষোভ হবে এবং সেগুলো শক্ত হাতে দমন করা হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ভারতীয় সাংবাদিক মানস ঘোষ ‘ব্যাটল ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কলাম লেখেন ভারতের ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এই নির্বাচন এক দশক ধরে শেখ হাসিনা যেসব নীতি এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন, সেগুলোর জন্য এক লিটমাস টেস্ট। তার মতে, শেখ হাসিনার এসব কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাবই পড়া উচিত নির্বাচনে। কিন্তু ‘এন্টি ইনকামবেন্সি’, অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, বিশেষ করে তার দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন মানস ঘোষ। বিএনপি সম্পর্কে মানস ঘোষ বলেন, ‘বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সাংগঠনিকভাবে তারা একেবারেই ছত্রভঙ্গ। একটি নির্বাচনমুখী দল হয়েও বিএনপি যে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল, সেটি ছিল তাদের জন্য ‘আত্মহত্যার শামিল।’
‘নিকেই এশিয়ান রিভিউ
নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কভারেজ দিয়েছে জাপানের সাময়িকী ‘নিকেই এশিয়ান রিভিউ।’ তাদের গত সপ্তাহের প্রচ্ছদ রচনা ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে, যার শিরোনাম ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব বাংলাদেশ।’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সব ধরনের প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশের বিশ্বের অন্যতম এক সাফল্যের উদাহরণে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশক ধরে ছয় শতাংশের ওপরে, দেশটির গার্মেন্টশিল্প চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে, আর মাথাপিছু আয় ২০০৯ সালের পর থেকে তিন গুণে বেড়ে এখন এক হাজার ৭৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। চরম দারিদ্র্য নেমে এসেছে ৯ শতাংশের নিচে। কিন্তু বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে গণবিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। শেখ হাসিনার বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, যেভাবে কঠোর হাতে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দেবে না। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনে সম্ভাব্য কারচুপি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পর পর পাঁচ বছরের দুটি মেয়াদের পর এখন কিছু ভোটারের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু আবার অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, অনেকেই একমত হবেন, ক্ষমতাসীন দলের বিজয় অধিকতর উন্নয়নের পক্ষে যাবে।
দ্য মিন্ট
ভারতের বিজনেস সাইট ‘দ্য মিন্ট’-এ লন্ডনভিত্তিক লেখক সলিল ত্রিপাঠির বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি বিশ্লেষণ ছেপেছে। এতে তিনি বলেন, একমাত্র জ্যোতিষী আর জরিপকারীরাই নির্বাচনের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং প্রায়শই তারা ভুল প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে বসে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আমার কাজ নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরে না আসে, সেটা বেশ অবাক করা ব্যাপার হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশি গল্পগাঁথায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নাকি আলোর পথের শক্তি, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দল আর তাদের বিরোধীরা নাকি অন্ধকারের শক্তি। কিন্তু বাস্তবে আজকের আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাপূর্ব কালের আওয়ামী লীগের মিল খুব সামান্য এবং আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দেখতে অনেকটা ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকের বাকশালের চেহারা নিয়েছে।