নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন-
শুক্রবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৯:
সৈয়দ আশরাফ পুরো নাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিন ১৯৫০ সালের পহেলা জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি ২০০২-০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৬ সালে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ আশরাফ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ভারমুক্ত হন তিনি। এরপর সৈয়দ আশরাফ ২০০৯-১৬ সাল পর্যন্ত দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন
১৯৭৫ সালের তেসরা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে সৈয়দ আশরাফের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। পিতার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফ যুক্তরাজ্যে চলে যান। লন্ডনে বসবাস কালে তিনি বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সেসময় তিনি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ যুব লীগের সদস্য ছিলেন। আশরাফুল ফেডারেশন অব বাংলাদেশী ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এফবিওয়াইইউ) এর শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে আশরাফুল দেশে ফিরে আসেন এবং জুন ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রীসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেন। এক মাস এক সপ্তাহ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন সৈয়দ আশরাফকে।
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফ ব্রিটিশ ভারতীয় নাগরিক শীলা ঠাকুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন এবং ২৩ অক্টোবর ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাদের একটি মেয়ে রীমা ঠাকুর লন্ডনের এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করছেন।
অসুস্থতা
২৪ অক্টোবর ২০১৭ সালে সৈয়দ আশরাফুলের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি প্রায়ই অসুস্থ হন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। নভেম্বর ২০১৮ সালে তার ফুসফুসের ক্যান্সার ৪র্থ ধাপে চলে যায়। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি। ৩ জানুয়ারি ২০১৯ ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আশরাফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সুযোগ্য পুত্র একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম-এর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও কীর্তিগাঁথা গৌরবময় নেতৃত্ব চির অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।