নিউজ ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
শুক্রবার,০৪ জানুয়ারি ২০১৯:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের পরই শুরু হয়ে গেছেমন্ত্রিসভা গঠনের কাজ। সোমবার মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।
মন্ত্রিসভা গঠনে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা যে বেশি সময় নেবেন না, সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।
এবারের মন্ত্রিসভা হবে চমকে ঠাসা। আগের দুটি মন্ত্রিসভা গঠনে বহু দিক চিন্তা করতে হয়েছে। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থান অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে মজবুত। তাই এবার মন্ত্রিসভা নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কোনো বাধা নেই।
অবশ্য শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা সবসময়েই চমকে ভরা থাকে। শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় বাঘা বাঘা নেতারাও অনেক সময় বাদ পড়ে যান। আবার এমন অনেক নেতাও ঢুকে পড়েন, যিনি জীবনে কোনো দিন ভাবেননি মন্ত্রী হবেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এবার অতীতের সব চমক ভেঙে রেকর্ড করবে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, অতীতের মন্ত্রিসভাগুলোতে প্রবীণ-নবীন সমন্বয় করা হতো। প্রবীণদের প্রাধান্য থাকত। নবীনদের সংখ্যা কম থাকত। তবে এবার সেই রীতি ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধুকন্যা এবারের কেবিনেটে তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা দিকে দক্ষদের প্রাধান্য দিতে পারেন এমন আভাস পাওয়া গেছে।
আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকারে এবার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগে ‘গতানুগতিক’ রীতি অনুসরণ করবেন না তিনি।
এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে দল ও বিভিন্ন সংস্থা পরিচালিত জরিপে উঠে আসা নেতাদের দক্ষতা, ত্যাগ, বিচক্ষণতা ও নেতৃত্বসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করা হচ্ছে।
এবার বাদ পড়ছেন বিতর্কিত, অদক্ষ ও বয়সের ভারে ন্যুব্জ বেশ কয়েকজন বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। গতবার মন্ত্রী হয়ে যারা বিতর্কে জড়িয়েছেন, তাদের এবার একেবারেই দেখা যাবে না। মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে যাচ্ছেন কয়েকজন নতুন মুখ ও সাবেক মন্ত্রী। থাকছে টেকনোক্র্যাট কোটাতেও কয়েকজন।
সব মিলিয়ে এবারের মন্ত্রিসভায় প্রকৃত অর্থেই বড় ধরনের চমক থাকছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক।
এ তালিকায় চমকে দেয়ার মতো কিছু নাম আছে। এমপি নন এমন বেশ কয়েক নেতাও আছেন। আছেন ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের ব্যক্তিত্বও। তৃণমূলের দুজন নেতার নাম আছে এ তালিকায়। একঝাঁক তরুণকে স্থান দিতে অনেক পুরনোকে বাদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। এ ক্ষেত্রে রোববার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, এবারের মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ছে। তরুণদের স্থান দিতে গিয়ে এই কলেবর বাড়ানোর চিন্তা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতে অভিজ্ঞ নেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, প্রবীণদের প্রতি গতানুগতিক যে অগ্রাধিকার পাওয়ার রীতি এতদিন মন্ত্রিসভায় চলে আসছিল, তা এবারের মন্ত্রিসভায় থাকছে না।
বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, আইসিটিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো এবং ডিজিটাল খাতে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করতে নতুনদেরই এগিয়ে রাখছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভায় চমক আসছে। তবে সেটি এখনই বলা যাবে না। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যেই এ নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পুনরায় এ পদে নিয়োগ পেতে পারেন।
জানা গেছে, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাম আলোচনায় আছে।
সূত্র আরও জানায়, মন্ত্রিসভায় নতুনদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই একে আবদুল মোমেন, আইন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শ ম রেজাউল করিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. আবদুল আজিজ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, সাংস্কৃতিকবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আকবর হোসেন পাঠান ওরফে নায়ক ফারুকের নাম শোনা যাচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে।
এ ছাড়া নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, গোলাম দস্তগীর গাজী, নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, দীপঙ্কর তালুকদার স্থান পেতে পারেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী; প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, ডা. হাবিবে মিল্লাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ; জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি; জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিনকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আবদুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক।
এদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ও সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী করা হতে পারে।
এর বাইরে থাকা দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনির মধ্যে একজনের ঠাঁই হতে পারে নতুন মন্ত্রিসভায়।
স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্যসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে যারা রয়েছেন তাদেরই রাখা হতে পারে। এ ছাড়া অনেকের দফতর পুনর্বণ্টন হতে পারে।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় ১৪-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু রয়েছেন। এবারও তাদের থাকার সম্ভাবনা আছে।
তবে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের পর পর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার নামও শোনা যাচ্ছে।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৪৪ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে বাদ পড়ার তালিকায় আছেন অনেকেই।
খবর: যুগান্তর