আন্তর্জাতিক ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯:
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
শামীমা অবশ্য নিজেই এ খবর জানিয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘স্কাই নিউজ’কে তিনি বলেছেন, ‘আমি যা কিছুর ভিতর দিয়ে গেছি তার জন্য আমার প্রতি সবার সহানুভূতি থাকা উচিত।’
সিরিয়া গিয়ে তিনি ভুল করেছেন কি না এমন প্রশ্নে বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী শামীমা বলেছেন, ‘একভাবে দেখলে, হ্যাঁ, কিন্তু এ নিয়ে দুঃখ করি না কারণ মানুষ হিসেবে এটাই আমাকে পাল্টে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে শক্ত, কঠিন করে তুলেছে। আমি আমার স্বামীকে পেয়েছি। যুক্তরাজ্যে ফিরে গেলে আমি তার মতো কাউকে পেতাম না।’
শামীমা আরও বলেন, ‘আমি নিজের সন্তান পেয়েছি, এখানে ভালো একটি সময়ও কাঁটিয়েছি। এরপর পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেল এবং আমি আর এটি নিতে পারছি না।’
এর আগে রবিবার শামীমাদের পারিবারিক আইনজীবী মোহাম্মদ তাসনিম আখুনজি রোডিও ফোরের দ্য ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানকে বলেছেন, ‘শামীমা ভালোভাবে সন্তানের জন্ম দিয়েছে এবং সে সুস্থ আছে এতে তারা অবশ্যই খুব খুশি ও উৎফুল্ল।’ ওই আইনজীবী জানান, শামীমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। তারা শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে চান।
চার বছর আগে মাত্র ১৫ বছর বয়সে সিরিয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা। বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান শামীমার সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। তারা হলেন-আমিরা আবাসি ও খাদিজা সুলতানা। বোমা হামলায় বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে খাদিজার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অপরজন আমিরার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা অজানাই রয়ে গেছে।
শামীমা ধর্মান্তরিত এক ডাচ নাগরিককে বিয়ে করে সিরিয়ার আইএস নিয়ন্ত্রিত শহর রাকায় বসবাস করছিলেন। পরে রাকার পতন হলে তারা ফোরাত নদীর তীরবর্তী আইএসের ছিটমহল বাঘুজে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি সিরিয়ায় আইএসের তথাকথিত ‘খিলাফতের’ অবশিষ্টাংশ বলে বিবেচিত বাঘুজের পতন হলে শামীমার স্বামী আত্মসমর্পণ করেন, আর বাঘুজের অন্যান্য বেসামরিকদের মতো শামীমার ঠাঁই হয় সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্থনি লয়েড সম্প্রতি সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এক শরণার্থীশিবিরে সাক্ষাৎ পান শামীমার। তখন শামীমা তাকে বলেছিলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগে অপুষ্টিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগে তার দুই সন্তান মারা গেছে। অনাগত সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান তিনি।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব দাবি না করেন, তবে তাঁকে দেশে ফিরে আসতে দিতে তারা বাধ্য। তবে শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।