নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন-
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৯: পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপালাতে কাতরাচ্ছেন হানিফ (২৩) নামে এক পাওনাদার। আহত হানিফ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। মাথায় ৪৪টি সেলাই নিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বলে জানান হানিফের স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে আহত হানিফের ভাই নবী উল্লাহ বাদী হয়ে পলাশ থানায় একটি মামলা রুজু করেন। এ মামলায় জালাল উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ৫জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও অজ্ঞাত আরো ৬জনকে আসামী করা হয়।
আহতর পরিবার সূত্র জানায়, হামলাকারী জালাল উদ্দিন এর চাপাতীর কুপে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম হয়ে তিনি এখন ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার মাথায় ও মুখে ৪৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানায় চিকিৎসক। এছাড়া এ হামলায় আহত হয়েছে হানিফের পরিবারের আরও তিন সদস্য। ভাঙচুর করা হয়েছে হানিফের ঘরে থাকা লক্ষাধিক টাকার মালামালও। গত শনিবার উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ভিরিন্দা গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য। এছাড়া তিনি ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। অপরদিকে আহত হানিফ মিয়া ওই ইউনিয়নের ভিরিন্দা গ্রামের মৃত হজরত আলীর ছেলে।
আহত হানিফ মিয়ার বড় ভাই নবিউল্লাহ জানান, ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন মেম্বারীর পাশাপাশি ইটভাটার ব্যবসা করেন। সেই সুবাদে তিনি এলাকার বিভিন্ন জমির মালিকদের কাছ থেকে ভাটার জন্য মাটি কিনে থাকেন। গত ৬ মাস পূর্বে ছোট ভাই হানিফ তার ভাটায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাটি বিক্রি করেছিল। জালাল মেম্বার মাটি বিক্রির ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ২ লাখ টাকা আর পরিশোধ করেনি। দীর্ঘ দিন ধরে টাকা চাইলেও তিনি টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়-ভীতি দেখাতেন।
গত শনিবার হানিফ পাওনা টাকা চাইলে মেম্বার ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশ্লীন ভাষায় গালাগালি শুরু করে। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কী হয়। পরে হানিফ বাড়িতে চলে আসলে জালাল মেম্বার ফোন করে তার ২৫/৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী এনে হানিফের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঘরে থাকা ফ্রিজ, টেলিভিশন, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুরে বাধা দিতে গেলে তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার বৃদ্ধ মা, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও আমাকে লাঠি পিটায় আহত হয়। এসময় মেম্বার দাঁড়িয়ে থেকে হানিফকে একেবারে মেরে ফেলা এবং বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য হুকুম দেয়।।
মেম্বারের অনুসারিরা তখন এলোপাতাড়ি দিলে হানিফ দৌড়ে ঘর থেকে বাহির হলে তারা আবারও তাকে দাওয়া করে বাড়ির পাশের একটি রাস্তায় ফেলে তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কুপাতে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের আত্মচিৎকারে আশেপাশের মানুষ ছুটে আসলে হামলাকারী ও মেম্বার চলে যায়।
আহত হানিফের মেজ ভাইয়ের স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, হামলার সময় জালাল মেম্বারের পায়ে ধরে মারধর বন্ধ করতে অনুরোধ করলে তিনি রেহেনাকে হামলাকারীদের দিয়ে ধর্ষণ করানোর হুমকী দেয়। তাকে সজোড়ে লাথি মেরে ফেলে দেয়। ঘটনার পর থেকে জালাল মেম্বার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হানিফের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যেনো এ বিষয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ না করে।
ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, হানিফ মাটি বিক্রির কিছু টাকা পাওনা রয়েছে। তাকে সময়মত পরিশোধ করবো বলেও জানিয়েছি। ঘটনার দিন হানিফ প্রথমে আমার ওপর আঘাত করে। পরে বিষয়টি আমার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত গ্রামবাসী হানিফের বাড়িতে হামলা করে। হামলার সময় নিজের উপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি একজন প্যানেল চেয়ারম্যান আমার শরীরে সে আঘাত করেছে, তাকে তো তখনই মেরে ফেলতাম।
ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, শুনেছি পাওনাদার হানিফ প্রথমে মেম্বারের শরীরে আঘাত করেছে। তবে মেম্বারের নেতৃত্বে পরের যেই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মকবুল হোসেন মোল্লা জানান, বাড়ি-ঘরে হামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ইউপি সদস্যের ওপর হামলার বিষয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। বাড়ি-ঘরে হামলা ও আহতের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।