নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে হাজারো প্রতিকূলতার মাঝে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতশিল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজশর্তে ঋণ, সুতা ও কাঁচামালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং চোরাই পথে আসা ভারতীয় নিম্নমানের কাপড় সরবরাহ বন্ধসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সংশ্নিষ্টরা।
জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই তাঁতের কারখানা ছিল একসময়। ১৯৭০, ১৯৮০ এবং নব্বই দশকে তাঁতকলগুলোতে শাড়ি, চাদর, লুঙ্গি, গামছা ইত্যাদি তৈরি হতো।
উপজেলার গোপালদী, রামচন্দ্রদী, গহরদী, শালমদী, বিশনন্দী, শ্রীনিবাসদী, জোকারদিয়া, উচিৎপুরা, আতাদী, ভৈরবদী, জাঙ্গালিয়া, বাড়ৈপাড়া, দাসিরদিয়া, সিঙ্গারপুর, দড়িসিঙ্গারপুর, পাঁচগাঁও, কামরাঙ্গীরচর, কান্দাপাড়া এবং খাগকান্দা গ্রামে তাঁতের খট খট শব্দে এলাকা মুখর থাকত।
এসব গ্রামে তাঁতকলে তৈরি নানা প্রকার কাপড় নরসিংদীর শেখেরচর, বাবুরহাট, সোনারগাঁয়ের বারদী, রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া, কাঞ্চন, মুড়াপাড়া, তারাব ও নোয়াপাড়া বাজারে কাপড় বিক্রি হতো।
তবে নব্বই দশকের পর থেকে এ দৃশ্য আর দেখা যায় না। ১০টি তাঁতের মালিক হলে তখনকার
সময় তাকে এলাকার সবাই সমীহ করে চলতেন। আর্থিক সমস্যায় পড়লে এলাকার তাঁতকলকে ঘিরে গড়ে ওঠা বেশকিছু তাঁতি সমিতি মালিকদের সহায়তা করতেন।
বিদ্যুৎচালিত পাওয়ারলুম কারখানার আর্বিভাবসহ নানা কারণে তাঁতকলগুলো প্রতিকূলকতার সম্মুখীন হয়। আর হাজারো প্রতিকূলতার মাঝে আড়াইহাজারের কয়েকটি গ্রামে এখনও তাঁতিরা তাদের তাঁতকল নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। তাঁতকলে গামছা, লালসালু, মার্কিন কাপড়, থ্রি-পিস, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি হচ্ছে।
পুরিন্দা গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, তাঁত ব্যবসা বহু বছর ধরে করছেন, এখন এটি তার নিজের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। লাভ কম কিংবা বেশি তা নিয়ে তিনি কখনও ভাবেননি। তিনি গামছা তৈরি করে সারাবছর বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করে আসছেন। তার ৮টি তাঁতে ৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রত্যেক শ্রমিক সপ্তাহে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা আয় করে থাকে। ৮টি তাঁত চালাতে তার ৫-৬ লাখ টাকা পুঁজি লাগে।
উদয়দী গ্রামের তাছলিমা আক্তার বলেন, হস্তচালিত তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে হলে স্বল্প সুদে তাঁতিদের ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি তৈরি পোশাকের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
পাঁচগাঁও গ্রামের তাঁত মালিক জামান মিয়া জানান, তার তৈরি পোশাক ঢাকার নামিদামি জায়গায় বিক্রি করে থাকেন। তবে তিনি মনে করেন, হস্তচালিত পোশাকের নতুন বাজার সৃষ্টি ও বিদেশে রফতানি করার ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পকে লাভজনক করে বাঁচানো সম্ভব। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন বলেন, হস্তচালিত তাঁতশিল্পের উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান যেসব সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করারও সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে সরকার ব্যাংকগুলোকে সহজশর্তে ঋণ প্রদান, তাঁত শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি চোরাই পথে আসা নিম্নমানের কাপড় সরবরাহ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।