ডেস্ক রিপোর্ট | নরসিংদী প্রতিদিন-
রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯:
পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন অবমাননা করে জনরোষে পড়েছেন সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা। অস্ট্রিয়া প্রবাসী এ বাংলাদেশি বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। সেফুদা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি।
নেটিজেনদের অতিরিক্ত মাতামাতি তাকে রাতারাতি ‘তারকা খ্যাতি’ এনে দেয়। বিতর্কিত বিভিন্ন মন্তব্য মজার ছলে লুফে নিয়েছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একাংশ। অল্প সময়েই সেফাত উল্লাহর ফ্যান ও ফলোয়ার সংখ্যা মাত্রা ছাড়ায়। ফেসবুকে তিনি যতটা না জনপ্রিয় তার চেয়ে অনেক বেশি বিতর্কিত। এক শ্রেণির মানুষ কৌতূহলের সঙ্গে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড লক্ষ করে গেছেন উৎসাহের সঙ্গে। আবার একটি শ্রেণি বরাবরই তার প্রতি বিরক্ত।
গত বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে পবিত্র কোরআনের পাতা ছিঁড়ে টয়লেটে ফ্লাশ করায় তিনি সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়েছেন। এরপর বেকায়দায় পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন অনেকে। এমনকি তার শত শত ফলোয়ারও ক্ষুব্ধ। নিছক ‘মজা’ করতে করতে তিনি এমন কা- ঘটাবেন তা ছিল অপ্রত্যাশিত।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লাইভ ভিডিওতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেন তিনি। অশালীন গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে পবিত্র গ্রন্থের ওপর জুতা নিক্ষেপসহ পবিত্র কোরআনের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ছিঁড়ে টয়লেটে ফেলে ফ্লাশ করেন। তার এ কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ। নানা শ্রেণির মানুষ তার তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি তুলেছেন। প্রতিবাদ ও আন্দোলন হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায়। যদিও প্রতিবাদের মুখে সেফাত উল্লাহ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। পরের এক ভিডিও পোস্টে গত বুধবার সেফাত উল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ভিডিওতে পবিত্র কোরআনের পাতা ছেঁড়েননি তিনি। উর্দু একটি বইয়ের পাতা ছিঁড়েছিলেন।
গত শুক্রবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা ভিয়েনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর সাংবাদিকদের জানান, ইস্টারের ছুটির পর বিষয়টি কূটনৈতিক চ্যানেলে অস্ট্রিয়া সরকারকে জানাবেন। তিনি বলেন, সেফাত উল্লাহর যেসব কথা ইউটিউবে পোস্ট হয়েছে, তাতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে অবমাননা করার বিষয় রয়েছে। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। আমরা একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন, বিষয়টি নিয়ে যেন ভিয়েনাতে বসবাসরত অন্যান্য দেশের মুসলিমদের মধ্যে অহেতুক কোনো উত্তেজনার সৃষ্টি না হয়।
সেফাত উল্লাহর জন্ম এলাকা চাঁদপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি উন্মাদ প্রকৃতির। এ জন্য প্রায় ২৫ বছর আগে তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন তার বাবা। সেফাত উল্লাহর বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ১৩ নম্বর সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড চেড়িয়ারা গ্রামে। তার বাবা মৃত হাজি আলী আকবর। সেফাত উল্লাহর বাবা তিনটি বিয়ে করেন। সবমিলিয়ে তার ভাইবোন ১৫ জনেরও বেশি। আপন ভাইবোনের সংখ্যা আটজন। তবে কারও সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সংসার জীবনে তার এক সন্তান রয়েছে। তিনি ইংল্যান্ডে থাকেন। তার স্ত্রী থাকেন ঢাকায়। প্রায় ২২ বছর আগে সেফাত উল্লাহ অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান।
এদিকে সেফাত উল্লাহকে দেশে অথবা বিদেশে আইনের হাতে তুলে দিতে পারলে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননাকারী সেফাত উল্লাহ সেফুকে দেশ এবং বিদেশের মাটিতে যারা আইনের আওতায় সোপর্দ করতে পারবে, তাদের জন্য ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করেন তিনি। এর আগেও ধর্ম নিয়েও বিভিন্ন সময় লাইভ ভিডিওতে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে নিজেকে বড় মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেও আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন সেফাত উল্লাহ সেফুদা।