সাহিত্য ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন:
জন হেনরি একজন আমেরিকান লোকগাথার কিংবদন্তি। তাকে নিয়ে গল্পের জন্ম হয়েছিল আফ্রিকান-আমেরিকান মজুরদের মধ্যে। তিনি রেলপথে স্টিল ড্রাইভারের কাজ করতেন। তিনি যন্ত্রের সঙ্গে হাতুড়ি হাতে প্রতিযোগিতায় নেমে জিতেছিলেন। তাকে নিয়ে অনেক গান, গল্প, নাটক রচিত হয়েছে।
৬ ফুট দীর্ঘ আর ২০০ পাউন্ড ওজনের হেনরি যে কোনো শক্ত কাজ করে ফেলতেন হাসিমুখে। তার ছিল ৯ পাউন্ড ওজনের এক বিশাল হাতুড়ি। রেলপথ নির্মাণে সঙ্গী শ্রমিকদের কেউই তার সঙ্গে কাজে পারতেন না।
লোহার পাত বহন করা থেকে শুরু করে খচ্চরের পিঠে মোট বয়ে নিয়ে যাওয়া, হাতুড়ি ও বড় স্টিলের পেরেক দিয়ে পাহাড় খনন করাসহ নানা কাজ করতে হতো শ্রমিকদের।
রেললাইন তৈরির জন্য একসময় পাহাড়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। রেলপথের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন স্টিল ড্রিল মেশিন আনার। কারণ এ পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ করা যে কোনো শ্রমিকের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার। হেনরি এ সিদ্ধান্ত মানলেন না। কিন্তু প্রকৌশলী ছিলেন তার সিদ্ধান্তে অটল। প্রকৌশলীর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন হেনরি। বলেন, মেশিনের চেয়েও বেশি এবং দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবেন তিনি।
হেনরির কথা শুনে শ্বেতাঙ্গ প্রকৌশলী তাচ্ছিল্য করে হাসলেন। শুরু হল প্রতিযোগিতা। এবার হেনরি হাতে তুলে নিলেন হাতুড়ি। একদিকে মেশিন অন্যদিকে হাতুড়ির শব্দ ধ্বনিত হচ্ছিল। হেনরি জীবনবাজি রেখে প্রাণপণে কাজ করে গেলেন। তার হাতুড়ির ঝলকে তৈরি হয় বিদ্যুৎ।
সুড়ঙ্গের বাইরে তখন টানটান উত্তেজনা। একসময় প্রতিযোগিতার সময়ও ফুরিয়ে আসতে থাকে। হাতুড়ি হাতে হেনরি খুঁড়ে ফেলেছেন ১৪ ফুট আর মেশিন রয়েছে তখনও মাত্র নয় ফুটে। মেশিনকে হারিয়ে জয়ী হন হেনরি। শ্রমিকদের আনন্দ-চিৎকার আর জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে যায় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সেই রেল সুড়ঙ্গ এলাকা।
কিন্তু সেই আনন্দ বেশি সময় থাকেনি। হাত থেকে হাতুড়ি খসে পড়ে হেনরির। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। জীবন দিয়ে শ্রমিকদের মাথা উঁচু করে গেছেন এভাবে।
জন হেনরি কাহিনী দুই ধরনের গানে দেখা যায়। একটি হল ব্যালাড- যা জন হেনরির ব্যালাড নামে পরিচিত, অপর ধরনের গান হাতুড়ি সঙ্গীত হিসেবে পরিচিত। তাকে নিয়ে ব্যালাডগুলোতে সাধারণত ৪টি অংশ থাকে, জন হেনরির বাল্যকাল এবং স্টিল ড্রাইভিংয়ের কাজ শুরু করা, যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, মৃত্যু এবং কবর, তার স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া। প্রায় ২০০ রেকর্ডেড ব্যালাড খুঁজে পাওয়া যায় জন হেনরিকে নিয়ে।
২০০০ সালে ডিজনি ‘জন হেনরি’ নামক একটি কার্টুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি ২০০০ সালে গিফোনি চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করে। ১৯৭৩ সালে লিক বোসটো এবং ডেভিড অ্যাডামস প্যারামাউন্ট পিকচারের জন্য একটি ১১ মিনিটের চলচ্চিত্র ‘দি লিজেন্ড অফ জন হেনরি’ নির্মাণ করেন। ১৯৭৪ সালে এটি অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ জন হেনরির ছবিসহ ৩২ সেন্টের ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
গত একশ বছর ধরে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক এবং লোকসাহিত্য গবেষক ধরে নিয়েছিলেন, জন হেনরি কিংবদন্তি মাত্র, কাল্পনিক এক চরিত্র। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু নতুন নতুন গবেষণায় অনেকেই চেষ্টা করছেন বাস্তবে জন হেনরি নামে কারও অস্তিত্ব তুলে ধরতে।
তার জন্য উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত। কিন্তু কোনোটাই খুব বেশি জোরালো নয়। কোনো কোনো গবেষক দাবি করেন, জন হেনরি নামে একজন বাস্তবে ছিলেন। সেই হেনরি বন্দি হিসেবে ছিলেন কারাগারে। আর কারাগারের শ্রমিকদের দিয়েই তৈরি করা হতো রেললাইন।
– সেলিম কামাল,দৈনিক যুগান্তর