লক্ষন বর্মন, নরসিংদী প্রতিদিন-
বুধবার ২৬ জুন ২০১৯:
অগ্নিদগ্ধ নুসরাত ও জান্নাতির পর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন নরসিংদীর ফুলন বর্মন! দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া নরসিংদীর ছাত্রী ফুলন বর্মণের মরদেহ তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফুলন বর্মণের মরদেহ বিকেলে বাড়িতে পৌছালে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। তার মরদেহ একনজর দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায় স্থানীয়রা। ফুলনের এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এইদিকে মেয়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে মেয়েকে রাত আটায় ঘোড়াদিয়া শ্মশানে সমাধিত করেন।
এ ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করে এমন ঘটনার যেন পুনারাবৃত্তি না হয় সে দাবী করেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসি স্বাগতা বর্মন বলেন, অপরাধে যেই হোক না কেন তার বিচার দ্রুত করা হোক। এমন বিচার করা হোক এই ঘটনার পর আর যেন কোন মেয়েকে এমন করে চলে যেতে না হয়।
এলাকাবাসি কানাই চন্দ্র বর্মন বলেন, ফুলন আমাদের গ্রামের মেয়ে, যারা তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্ঠা করেছে এবং ১৩ দিন জীবনের সাথে লড়াই করে আজ সকালে ফুলন বর্মন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যায়। এমন ঘটনা বীরপুর গ্রামে এই প্রথম, এটি একটি নেক্কারজনক ঘটনা সেই সাথে আমরা আসামীদের ফাসি দাবী করি।
ফুলনের বাবা যোগেন্দ্র বর্মন বলেন, মরার আগে আমার মেয়ে ফুলন আমাদের কাছে বলে গেছে বাবা আমি আগুনের পোড়া, মরার পর আর চিতার পোড়ায় না। আমাকে সমাধি দিও। আগুনের পোড়ে যে কষ্ঠ পেয়েছি মরা পর আমাকে আর সে কষ্ঠ দিওনা। সমাধি দিয়ে মেয়ের শেষ ইচ্ছাই পূরণ করব। সেই সাথে আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার দাবি করি। আমার মেয়ের শেষ ইচ্ছাটা যেন পুরন হয় তার আত্মা যেন শান্তি পায়।
নরসিংদী পৌর ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ.কে.এম ফজলুল হক লিটন বলেন, ফুলন বর্মনের হত্যার সাথে জড়িত হিসেবে পুলিশের কাছে তার ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মন ঘটনার সকল কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করি। এমন ঘটনার যেন পুনারাবৃত্তি না হয় এবং আসামীদেরকে দ্রুত বিচারের আনার আহবান জানাচ্ছি।
নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শফিউল রহমান বলেন, ফুলন রাণী বর্মনের ঘটনায় পাশের বাড়ি হিরালাল বর্মন ও শুকলাল বর্মনের সাথে ফুলন বর্মনের বাবার জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। প্রতি পক্ষকে মামলার জালে ফাঁসানোর জন্য ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মন ও তার ভাইয়ের বন্ধু রাজু সূত্রধর এবং আনন্দ বর্মন ঘটনার সাথে জড়িত বলে আদালতে ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। এই ঘটনায় যদি অন্য কোন ব্যক্তি জড়িত থাকে তাদেরকেও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব। অতি দ্রুত এই মামলার র্চাজসিট করে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।
উলেখ্য: গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ৮টায় শহরের বীরপুর মহল্লায় পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে সদাই কিনে বাসায় ফেরার পথে ফুলনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে তার শরীরের ২১ ভাগ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১৩ দিন পর বুধবার (২৬ জুন) সকালে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মণসহ তার দুই সহযোগী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আগুন দিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।