তৌহিদুর রহমান | নরসিংদী প্রতিদিন-
রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯: কোন তদবীর বা ঘুষ নয় শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নরসিংদীতে সম্পন্ন হয়েছে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগে চূড়ান্ত প্রাথী বাছাই।
রবিবার(৩০ জুন) নরসিংদীর পুলিশ সুপার ও বাছাই কমিটির সভাপতি মিরাজ উদ্দিন আহমেদ (বিপিএম,পিপিএম) চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেন। সাধারন পুরুষ ৪৩,মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৭, পোষ্য কোটায় ৩, আনসার কোটায় ২, সাধারন নারী ২১জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৬ জন মনোনীত হয়েছেন। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তারা পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পাবেন। নরসিংদীতে টেইরি রিক্রুচ কনস্টেবল নিয়োগ বাছাই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নারায়গঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম. মানিকগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন (পিপিএম)। নারী পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১৪ শত লোক পুলিশ লাইনে চাকুরীর আবেদন নিয়ে আসেন। শারারীক বাছাইয়ের পর ৪৭১ জনকে লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়া হয়। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৫৫ জন পুরুষ ও ২১ জন কে নারীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের নিয়োগের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ রাখতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট ছিলাম। সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতায় আমরা তা সঠিকভাবে করতে পেরেছি। শারারীকভাবে বাছাই ও লিখিত পরীক্ষায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৫৫ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩২ জনের বাবা কৃষক, ১৭ জনের বাবা বর্গা চাষী, ১২ জনের বাবা শ্রমিক, ৪ জনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা, ৭ জনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত, অন্যন্যদের মধ্যে রয়েছে স্কুল শিক্ষক, রিকশাচালক, চা বিক্রেতা, কাঠ মিস্ত্রী, নৈশপ্রহরী ও নরসুন্দর । শিবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত আধঘাটিয়া এলাকার রিকশাচালক আব্দুর রহমান ভুইয়া যাকে মানুষ কাইল্লা বলে ডাকে তার ছেলে মারুফ মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী পেতে যাচ্ছে। এ সংবাদে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে শরীফের পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে। শরীফ চাকুরী পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে বলে, সরকারী চাকুরী পেতে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে হয়। তার উপর পুলিশের চাকুরী তো সোনার হরিণ। তবে এবার পত্র-পত্রিকায় ও ফেসবুকে দেখেছি চাকুরী নিতে কোন টাকা লাগবেনা। চাকুরী পাওয়ার জন্য কারও সাথে কোন টাকা লেনদেন না করার জন্য আহবান জানিয়েছেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার। সে আশায় বুক বেধে পুলিশ লাইনে যেয়ে লাইনে দাড়াই। সেখানে কাগজপত্র চেক তারপর শারারীক পরিক্ষায় উত্তির্ণ হই। তারপর লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে চূড়ান্দভাবে নির্বাচিত হয়েছে। আমি নরসিংদীর পুলিশ সুপারের প্রতি শুভকামনা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে চাকুরী করে মানুষের সেবা করতে চাই। আমাদের গ্রামে সরকারী চাকুরীজীবী কেউ নেই। আমার চাকুরী পাওয়ার খবরে গ্রামের মানুষ খুব খুশি হয়েছে।
পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন,চূড়ান্তভাবে প্রার্থী বাছাই হবার পর অনেক ছেলেকেই অঝোড়ে কাদতে দেখেছি। এ তাদের আনন্দ অশ্রু কোন ধরনের তদবীর কে সুযোগ না দিয়ে স্বচ্ছতা ভাবে তাদের কে চাকুরী দিতে পেরে পুলিশ সুপার হিসেবে আমি গর্বিত। আমি প্রত্যাশা করি যারা চাকুরী পাবেন তারা যেন আন্তরিকভাবে মানুষের সেবা করে বাংলাদেশ পুলিশের মুখ উজ্বল করে। দেশপ্রেম আর সততায় তারা যেন অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠে সে কামনা করি।