নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন- রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯:
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওছিয়তকৃত রংপুরের পল্লী নিবাসেই তাকে সমাহিত করার দাবি জানিয়েছেন রংপুর বিভাগের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
রংপুরের নেতারা দাবি করেন, এরশাদ যখন সুস্থ ছিলেন তখনই তিনি একটি সমাধি কাম-কমপ্লেক্স’র ডিজাইনও করেছিলেন।
রবিবার দুপুরে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জেলা জাতীয় পার্টি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমাদের এতিম করে দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক পিতা চির বিদায় নিয়েছেন। আমাদের মুখের আর ভাষা নেই। জীবনদশায় এরশাদ আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর পল্লীনিবাসে সমাধি দিতে। তাই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও রংপুরবাসী চায় এরশাদের সমাধি রংপুরে করা হোক।
মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার স্যারের লাশ আসবে রংপুরে। তার জানাজা নামাজ বাদ জোহর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
এরশাদভক্ত নগরীর ৩২নং ওয়ার্ডের মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সারা দুনিয়ার মানুষ জানে এরশাদ রংপুরের সন্তান। তিনি মারা যাবার পর এখন শুনছি তার কবর রংপুরের বাহিরে ঢাকাতে হবে। আমি চাই রংপুরের মাটিতে তার শেষ ঠিকানা হোক। এদিকে এরশাদ ভক্তদের মতো জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও চাইছেন রংপুরেই তাদের নেতার সমাধি করা হোক।
রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন বলেন, ‘জাতির জনকের সমাধি তার নিজ গ্রাম টুঙ্গিপাড়াতে হয়েছে। সেখানকার মানুষরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন আগলে রেখেছেন, আমরাও আমাদের নেতা এরশাদকে আগলে রাখব। এটাই রংপুরের মানুষের দাবি।’
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ‘নব্বইয়ে সরকার পতনের পর এরশাদ স্যার জেলে বন্দি হয়েছিলেন। রংপুর থেকেই তার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছিল। রংপুরের মানুষই তাকে ভোট দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য এরশাদ স্যারের জন্য এ অঞ্চলের মানুষের কোনও ঘাটতি নেই। তাই পার্টির সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য রংপুরের মাটিতেই এরশাদ স্যারের সমাধি করা উচিত।’
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এরশাদ সাহেব অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি পার্টির বিভিন্ন স্থরের নেতাদের সাথে আলাপচারিতায় তার অন্তিম সমাধি রংপুরের পল্লী নিবাসে করার জন্য ওছিয়ত করে যান। সেজন্য তিনি একটি সমাধি কাম-কমপ্লেক্স নির্মানের জন্য ডিজাইন প্লানিংও করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার কারণে সেই প্লানিং তিনি জনসমুখে বলে যেতে পারেন নি। সেকারণে আমরা জাতীয় পার্টি রংপুর বিভাগ, জেলা, মহানগরসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন এবং রংপুর বিভাগ বাসীর পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপির সমাধি তাঁর ওছিয়তকৃত স্থানে করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি। চেয়ারম্যানের সমাধিকে আকড়ে ধরেই আমরা তার জীবন দর্শন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি এরশাদ স্যারের সমাধি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য রংপুরে ২ একর জমি দিতে চেয়েছি। দলীয় সভায় তা উপস্থাপনও করেছি। জাতীয় পার্টির অনেকেই স্যারের সমাধির জায়গার জন্য জমি দিতে চেয়েছেন।
রংপুর জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন সুমন বলেন, এরশাদ স্যারের পরিবারের বেশির ভাগই রংপুরে শায়িত আছেন। তার প্রতি রংপুরের মানুষের আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। যা কোনদিনই শোধ করা যাবে না। তাই আমি মনে করি, স্যারের সমাধি রংপুরে করা হোক। রংপুরের মানুষ যেন তার সমাধিতে ফুল দিতে পারে।
এদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পার্টির সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য রংপুরের মাটিতেই এরশাদ স্যারের সমাধি করারর দাবি জানান। তারা মনে করেন, রংপুরে এরশাদের সমাধি করার হলে সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, রবিবার সেনানিবাস মসজিদে প্রথম জানাজার পর আগামীকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় পার্টির বিজয়নগর-কাকরাইল আফিসে নেয়া হবে। বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজা। রাতে সিএমএইচের হিমঘরে লাশ রাখা হবে। রাতে সিএমএইচের হিমঘরে লাশ রাখা হবে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারে করে রংপুরে নেওয়া হবে। রংপুর জেলা স্কুল মাঠে বা ঈদগাহ মাঠে বাদ জোহর চতুর্থ জানাজা হবে। বিকালে সেনাবাহিনী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সংসদীয় বিরোধী দলীয় এই নেতা। গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন এইচএম এরশাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে হিমোগ্লোবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি লাইফ সাপোর্ট ছিলেন।