ডেস্ক রিপোর্ট | নরসিংদী প্রতিদিন-
মঙ্গলবার,৩০ জুলাই ২০১৯:
রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে একটি বিভ্রান্তিকর বার্তা। সেখানে এডিস মশা মারতে ব্লিচিং পাউডার বা টয়লেট ক্লিনার বেসিনে ঢালার জন্য ঢাকার বাসিন্দাদের বলা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
ফেসবুকের ওই বার্তায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বসবাসকারী সবাইকে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পরে প্রত্যেকের বেসিনে ৫০০ গ্রাম এর একটা টয়লেট ক্লিনার বা ৫০০ গ্রাম ব্লিচ পাউডার ঢেলে পানি দিতে বলা হয়েছে। এতে ঢাকা শহরের শতকরা ৭০ শতাংশ ড্রেন, ডোবা-নালাসহ অন্যান্য স্থানে থাকা মশা এবং এর লার্ভা ধ্বংস হয়ে যাবে। জনস্বার্থে বিষয়টি প্রচারের জন্য এ ধরনের পোস্ট ও মেসেজ শেয়ার করার জন্য বলা হয়েছে। তবে অনেকেই বিষয়টিকে গুজব বলে আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ তার ফেসবুকে এ পোস্টে বলেন, ‘ফেসবুক, হোয়াটসএপ সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নতুন গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে একযোগে হারপিক ও ব্লিচ সবার টয়লেটে ঢেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যাবে। আমি দুইজন পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি এই কথা একদম ভুল। এডিস মশা শুধুমাত্র পরিষ্কার ও জমা পানিতেই বংশ বিস্তার করে। বরং একযোগে হারপিক ও ব্লিচ ঢালা মানে হচ্ছে আমাদের সুয়ারেজ ব্যবস্থায় অতিমাত্রায় ক্ষতিকর পদার্থ ঢুকিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নতুন বিপদ ডেকে আনা। এই গুজবে কান দেবেন না, যারা এই গুজব ছড়াবে তাদের চ্যালেঞ্জ করুন।’
বিষয়টি সম্পর্কে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য। যাদের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা নেই তারা এটি সহজে বিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু আপনার জানা উচিত, সোয়ারেজ লাইনে কোনো এডিস মশা থাকে না। সেখানে থাকে কিউলেট মশা। আর এই মশা আমাদের কোনো বড় ক্ষতি বা মহামারি ছড়াচ্ছে না।
ঢাকার বাসিন্দারা একসাথে নর্দমায় হারপিক বা ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে কি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর ফল হবে খুব ভয়ানক। এটি নর্দমায় ফেলা হলে তার রাসায়নিক ক্ষতি পরিবেশে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা কল্পনাতীত। একজন বক্ষ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি জানি দীর্ঘ সময় হারপিক বা ব্লিচিং পাউডারে থাকা ক্যামিকেলের গন্ধ নিলে তা মানুষের ফুসফুসের প্রচণ্ড ক্ষতি করে। সেই সঙ্গে মানুষের ডাইজেস্ট ব্যবস্থাপনারও ক্ষতি করে এই গন্ধ। সব মিলিয়ে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় হতে পারে।
ডেঙ্গুর আবাসস্থল ও বংশবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেঙ্গু মশার বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম হলো যেখানে স্বচ্ছ পানি ও কোনো স্রোত নেই সেসব জায়গায় এই মশা থাকতে চায়। অতিরিক্ত বাতাস এসে ঢেউ তৈরি করতে পারে এমন স্থানে তারা থাকে না। সরাসরি সূর্যের আলো যেখানে পরে সেখানেও তারা থাকতে পারে না। কিন্তু বংশবৃদ্ধির জন্য তাদের প্রয়োজন ৩০/৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা। সুতরাং তাদের বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা মানুষই তৈরি করে দেয়।
মশা যেন বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, স্বচ্ছ পানি যেন তিনদিনের বেশি কোথাও আটকে না থাকে। আর আটকে রাখতে বাধ্য হলে তাতে যেন কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়। এতে মশার বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হবে। সূত্র-সমকাল