নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার , ২৪ আগস্ট ২০১৯:
নরসিংদীর রায়পুরায় সরকারি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ফেমাস অটো গ্যাস ফিলিং এন্ড কনভার্সন (প্রস্তাবিত) নামে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে প্রাকৃতিক জলাধার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এই চিত্র রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের খানাবাড়ি রেল স্টেশনের পাশে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খানাবাড়ি রেল স্টেশনের চার পাশে প্রায় ১কিলোমিটারের মধ্যে ২টি রেলওয়ের কালভার্টসহ মোট ৮টি কালভার্ট রয়েছে অত্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য। মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্বকান্দী, বাহেরচর, টেকপাড়া, হুগলাকান্দী, মির্জানগর ও উত্তর মির্জানগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বর্ষার পানি এখানকার কয়েকটি কালভার্টের নিচ দিয়ে ১০নম্বর ব্রিজ হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদে চলে যায়। এই অঞ্চলটি সবজি নির্ভর হওয়ায় খানাবাড়ি রেল স্টেশনের চার পাশ জুড়ে এক কিলোমিটারের মধ্যে রেলওয়ের ২টি কালভার্টসহ মোট ৮টি কালভার্ট রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য। এর মধ্যে খানাবাড়ি রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে একটি রেলওয়ে কালভার্ট (৫৭ নং) ও পাশাপাশি একটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কালভার্ট, উত্তর দিকে উত্তর মির্জানগর যাওয়ার পথে ১টি কালভার্ট, পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি রেলওয়ে কালভার্ট (৫৮ নং) ও পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি কালভার্ট, মাঝখানে রয়েছে স্টেশনের দক্ষিণ দিকে হুগলাকান্দী যাওয়ার জন্য একটি কালভার্ট এবং এই কালভার্টটির কাছাকাছি খানাবাড়ি রেলগেইট থেকে চরসুবুদ্ধি পুলের ঘাটে যাওয়ার পথে ৫০ গজের মধ্যে রয়েছে ২টি কালভার্ট।
এর মধ্যে রেল গেইটের মোড়ে যেই গুরুত্বপূর্ণ কালভার্টটি রয়েছে সেই কালভার্টটিকে ইটের দেয়াল করে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে ওই প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম। টাকা ও স্থানীয় নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে এমন পরিবেশ বিরোধী ও জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করেছেন তিনি এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায় এই প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম, মোবারক ভেন্ডার নামে একজনের জায়গা জোরপূর্বক দখল করেই প্রতিষ্ঠানের জন্য বালু ভরাট করেছেন।
মির্জানগর গ্রামের কৃষক আবু তাহের নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, এই কালভার্টটি বন্ধ করে ফেলায় ওই পাড়ের পানি এই পাড়ে আসতে পারে না। পানি ঠিকমত না আসায় ব্যহত হচ্ছে কৃষি কাজ। এছাড়া এলাকায় তার প্রভাব বেশী থাকায় তাকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না কেউ।
হুগলাকান্দী গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, মির্জানগর, উত্তর মির্জানগর, নয়াহাটি, বাঙ্গালী নগর ও বাহেরচর এই ৫াট গ্রামের বর্ষার পানি খানাবাড়ি রেল স্টেশনের পূর্বপাশের ৪টা কালভার্টের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কালভার্টটি বালুদিয়ে ভরাট করে সেখানে এলপিজি ফিলিং স্টেশন করা হচ্ছে। আর এই কারণে ঐ ৫াট গ্রামের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ছে। এতে করে দূর্ভোগ পোহাতে হবে এলাকাবাসীসহ কৃষকদের। এছাড়া সে আরেকজনের জমি জোরপূর্বক দখল করে বালু দিয়ে কালভার্ট ভরাট করেছে। এটা সে কোনভাবেই করতে পারে না। শুধু টাকা ও স্থানীয় নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে সে এই অনৈতিক কাজটি করেছে। গ্রামবাসীদের স্বার্থে এই কালভার্টের মুখ সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করবে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট এই দাবী জানাচ্ছি।
কালভার্টের মুখ কেন এভাবে বন্ধ করা হয়েছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ফেমাস অটো গ্যাস ফিলিং এন্ড কনভার্সন (প্রস্তাবিত) এর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, আমি অনুমতি নিয়েই এখানে কাজ করছি। তবে কার অনুমতি নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি জানাতে অসম্মতি প্রকাশ করে তার সাথে দেখা করে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য জানান। এছাড়া জায়গা দখল করার বিষয়টি জানতে চাইলে এই বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এই ব্যাপারে স্থানীয় মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে জানান, সবকিছু জেনে, শুনে এবং দেখেই এই প্রতিষ্ঠানের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সেতো পুরোপুরি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে নাই। সে এটা করতে পারে।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহম্মদ হাফিজুর রহমান নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি কালভার্ট বা জলধারা বন্ধ করে কোন প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা নির্মান করার কোন সুযোগ নাই।