খন্দকার শাহিন | নরসিংদী প্রতিদিন-
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯:
নরসিংদীর মাধবদীতে পুরনো ঐতিহ্য আখড়ে ধরে রাখতে আলগী তারিনী বাবুর ভূইয়া বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা, জমির পরিমাণ সংরক্ষিত করে প্রাচীর নির্মাণ অতি জরুরি। সেই সাথে একটি মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার পাঠক ফোরাম ‘এগারজন’ মাধবদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা কমিটি।
গত মঙ্গলবার(৩ সেপ্টম্বর) বিকালে, মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও খোলা কাগজের জেলা প্রতিনিধি খন্দকার শাহিন, এগারজন সংগঠনের মাধবদী কলেজ শাখার সভাপতি আহামাদুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন সাদ্দাম পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন সহ-সভাপতি কাউছার আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য ইয়ানুর, ফাহাদ বাদশা, এস এ সিফাত, আরফি, জয়, শুক্কুর আলী প্রমুখ।
বিভিন্ন বই পুস্তক থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে বর্তমান নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগী গ্রামকে কেন্দ্র করে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ও আশপাশে বসতি গড়ে উঠে। এ এলাকায় মহেশ্বরদী পরগনার অধীনে ছিল-যা দীর্ঘদিন ঈশা খাঁ ও মোগলরা রাজত্ব করতেন। ওই সময় আলগী গ্রামে বসতি গড়ে তোলেন তারিনী বাবুর পূর্ব-পুরুষ যার একজনের সম্ভবত নাম বানেশ্বর। তারিনী বাবু ভূইয়ারা তিন ভাই ছিলেন আশ্বিনী কুমার ভূইয়া ও সতীশ ভূইয়া। ১৯৫০ সালে পূর্বে তৎকালীন সময়ে প্রচুর ধনদৌলত ও জমি-জমার মালিক ছিলেন তারা। তাই নামের শেষে তালুকদার ও ভূইয়া নাম সংযুক্ত থাকতো।
সতীশ ভূইয়ার প্রকৃত নাম ছিল সতী প্রসন্ন ভৌমিক, তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে এম,এ, বি, এল পাশ। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ও শানা-মাকুর পাইকারী ব্যবসা করতেন। এছাড়া ঢাকা ও ভারতে ব্যবস ছিল। তারিনী ভ‚ইয়ার দুই ভাই ব্যবসায় উদ্দেশ্যে দূরদূরান্তে থাকতেন। তাদের অর্থ সম্পদে ঘেরা অট্টালিকায় মাত্র দুই তিনজন পাহাদার ছিলো।
হঠাৎ একদিন রাতে একই উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামের ডাকাত সর্দার হিন্দু যুবক হোমা দাস তার তিন সহকর্মী ডাকাতকে নিয়ে পাকড়াও করে তারিনী ভূইয়া বাবুর বাড়ী। এতে তারুনী ভূইয়ার বসত ঘরে ঢুকে ডাকাত দল। তাদের দুজনের হাতে ছিলো শক্ত লাঠি আর অপরজনের হাতে বন্দুক। তারিনী বাবু তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠেন- ‘মান কচুর ড্যাগা নিয়ে মারতে আইছস’? কথা শুনে বন্দুক হাতে ডাকাত সর্দার তাক করে গুলি ছুড়েন। মূহুর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তানিরী ভূইয়া। ডাকাত দল কেমন অর্থ কড়ি লুট করেছিল জানা যায়নি। তারিনী ভূইয়ার মৃত্যুতে তিনদিন ধরে শোক পালিত হয়।
এছাড়া ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে বেশ কয়েক বার দাঙ্গা হামলা হয় তারনী ভূইয়ার বংশের উপর। সুযোগ বুঝে তারনী ভূইয়ার বংশধররা কিছু জমি জমা হস্তান্তর করেন, আর বেশীর ভাগ জায়গা-জমী ফেলে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে নামে বে-নামে দখল হচ্ছে ভূইয়া বাড়ির জমি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধকালীন পরিত্যক্ত বাড়িতে ছিল মুক্তি বাহিনীর আস্তানা। যুদ্ধ চলাকালীন ১৬ অক্টোবর পাক হানাদার বাহিনী আলগী গ্রামে তারিনী বাবুর ভূইয়াবাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সেখানে অবস্থানরত ছয় মুক্তিযোদ্ধাকে একটি কাঁঠাল গাছে বেঁধে গুলি করে ও বেয়নেটের আঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এলাকাবাসীর দাবি তারিনী বাবু ভূইয়াবাড়ির প্রাচীর নির্মাণ করে দৃষ্টিনন্দন ও একটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর,একটি কমপ্লেক্স স্থাপন করার জন্য সরকারের কাছে আহ্ববা জানান এগরজন কমিটি।