পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, পুরুষ নারীদের অভিভাবক তাদের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং যেহেতু পুরুষরা নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে সুতরাং সাধবী স্ত্রী অনুগত হয়ে থাকে পুরুষের অনুপস্থিতে আল্লাহ হেফাজতে তার অধিকার সংরক্ষণ করে (সূরা নিসা আয়াত ৩৪)।
সামনের পর্বগুলোতে আমরা আলোচনা করব সেই সব অধিকার নিয়ে যেগুলো একজন স্বামীর উপর স্ত্রীর যে হক রয়েছে তাতে একজন স্ত্রী তার স্বামীর সঙ্গে কিরূপ কর্মনীতি অবলম্বন করবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। স্ত্রী হলো সংসার জীবনের এক পিঠ, অপর পিঠে আছে স্বামী। ইসলাম এক পেশে বিধান দেয়ার মত দ্বীন নয়। বরং জীবনের সব ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বিধান দেয়া ইসলামের রীতি। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সংসার জীবনের জন্য আছে ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ বিধান। ইসলাম যেমন স্ত্রীর অধিকার বিষয়ে বিধান দিয়েছে তেমনি বিধান আছে স্বামীর অধিকার এর ক্ষেত্রেও। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা কামিয়াবী নিশ্চয়তা বিধান করেছে ইসলাম। হলে যেভাবে স্বামীর দায়িত্বে স্ত্রীর অধিকার পাওনা আরোপ করেছে তেমনি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল স্ত্রীর দায়িত্বেও স্বামীর অধিকার আরোপ করেছেন পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এই উভয় প্রকারের অধিকার আদায়ের ওপর জোর তাগিদ করা হয়েছে।
আজ সবাই নিজ নিজ পাওনা দাবি করছে :
ইসলাম প্রতিটি মানুষকে আপন দায়িত্ব পালনের প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। পাওনা আদায় করে নেয়ার প্রতি ইসলাম জোর দেয়নি । কিন্তু আজকের পৃথিবী অধিকার দাবির জগতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ পাওনা দাবি করছে এবং তার জন্য আন্দোলন করছে , বিক্ষোভ হচ্ছে, হরতাল হচ্ছে। যেন পৃথিবীর সব চেষ্টা প্রচেষ্টা নিজের অধিকার ও পাওনা আদায়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর জন্য বহু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হচ্ছে এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। কিন্তু দায়িত্ব পালনের জন্য আজ পর্যন্ত কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কারোরই ভাবনা নেই যে আমরা দায়িত্বে যেসব কর্তব্য আরোপিত হয়েছে আমি তা পালন করছি কিনা। শ্রমিক বলছে আমার পাওনা দাও। পুঁজিপতি বলছে আমাকে আমার অধিকার পুরোপুরি পেতে হবে কিন্তু দুই পক্ষের কারণেই এই ভাবনা এই যে আমি আমার কর্তব্য কিভাবে পালন করব? পুরুষ বলছে আমাকে আমার হক পেতে হবে। নারী বলছে আমাকে আমার অধিকার ফিরে পেতে হবে। আর এর জন্য নানা চেষ্টা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, বিবাহ চলছে, বিগ্রহ চলছে কিন্তু আল্লাহর কোন বান্দা এই চিন্তা করছে না যে আমার জিম্মায় যেসব দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে আমি সেসব আদায় করছি কিনা ???
সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে :
কিন্তু আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর শিক্ষার সারমর্ম হলো, প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি মনোনিবেশ করবে। প্রত্যেক মানুষ যদি আপন আপন দায়িত্ব পালন করতে শুরু করে তাহলে সবার হক আদায় হয়ে যাবে। শ্রমিক তার দায়িত্ব পালন করলে মালিকের পাওনা আদায় হয়ে যাবে। মালিক তার কর্তব্য পালন করলে শ্রমিকের হক আদায় হয়ে যাবে। স্বামী তার দায়িত্ব পালন করলে স্ত্রীর হক আদায় হয়ে যাবে।
স্ত্রী তার দায়িত্ব পালন করলে স্বামীর হক আদায় হয়ে যাবে ।ইসলামের মূল দাবিটি যে তুমি তোমার দায়িত্ব পালনের ভাবনা করো।
আদর্শ জীবন গড়ার পদ্ধতি :
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই নীতি অবলম্বন করেছে যে, অভিকে আপন আপন কর্তব্য বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্বামীকে বলে দিয়েছেন তোমার দায়িত্ব এগুলো, স্ত্রীকে বলে দিয়েছেন তোমার কর্তব্যের তালিকা এই। এবার দুজনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ভাবো না ভাবো বস্তুত জীবনের গাড়ি এই নিয়মে চলে যায় অভয় আপন আপন দায়িত্ব পালন করবে এবং অপরের পাওনা পরিশোধ করে দেবে। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে চেতনা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে জীবনে সমৃদ্ধ ও সুখময় যৌবনের গাড়ি সঠিক পথে গন্তব্য পানে এগিয়ে যাবে। আমাদের জীবনকে সুখময় রূপে গড়ে তুলতে আল্লাহ ও তার রাসূলের ভাবনা এত বেশি যে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই জাতীয় দিকনির্দেশনা পরিপূর্ণ যে, তোমার দায়িত্ব এই আর তোমার কর্তব্য এই। এই সম্পর্ক কর্তব্যে যদি ফাটল ধরে যায়, তাহলে এই জগতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এতো অপ্রিয় দ্বিতীয়টি আর নেই যতটা অপ্রিয় স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া।
পুরুষ নারীর অভিভাবক :
باب حق الزوج على المراة
স্ত্রীর উপর স্বামীর হক নির্দেশ স্বামীর টি চলবে যা হোক যেহেতু আল্লাহ পুরুষকে কাম বানিয়েছেন সেহেতু সিদ্ধান্তটাই মান্য করতে হবে তবে হা নারীরা মতামত ও পরামর্শ দিতে পারে। আর আমি পুরুষকে এই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি যে পুরুষরা যেন যথাসম্ভব তোমাদের মনোরঞ্জনের প্রতি লক্ষ্য রাখে। কিন্তু সিদ্ধান্ত তারটাই মান্য করতে হবে সুতরাং যদি এই বিষয়টি মাথায় না থাকে আর বেগম সাহেবা কামনা করে প্রতিটি বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তই চলবেই স্বামীরটা নয় আমি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করব তাহলে এই পন্থাটি হবে স্বভাব শরীয়ত বিবেক ইসলামের পরিপন্থী। এর ফলে সংসারে অধঃপতন ছাড়া আর কিছুই হবে না।
মুহাম্মদ আবু নাঈম | নরসিংদী প্রতিদিন,
ও খতীব-মাওলানা আঃ হক জামে মসজিদ দৌলতপুর মনোহরদী নরসিংদী।