শরীফ ইকবাল রাসেল | নরসিংদী প্রতিদিন-
রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ :
মানব জগতে নর-নারীর জীবনের জন্য বিয়ে একটি অপরিহার্য অংশ। হোক সে যে কোন ধর্মের। বিয়েটি স্বচ্ছল পরিবারের মাঝে মহা ধুমধাম আর দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের সাধ্যমতো হয়ে থাকে। কিন্তু নরসিংদীতে একজন বিশেষ হাহিদা সম্পন্ন কণ্যা জুয়েনার বিয়ের অনুষ্ঠানটি ব্যাপক আয়োজনের মাঝে সম্পন্ন হয়। আর সেটি সম্পন্ন করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। তাও আবার জেলা প্রশাসনের সবচেয়ে মূল্যবান স্থান সার্কিট হাউজে। আর এই বিয়েতে জেলা প্রশাসকের প্রাপ্ত সম্মানীর সবটুকু অর্থই উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন।
নরসিংদী শহরের ভেলানগর মহল্লার আসাদ মিয়ার তিনটি সন্তানের সকলেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় আসাদ মিয়া তাদের ছেড়ে চলে চায়। পরে নানার বাড়িতেই বড় হয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দুই বোন ও এক ভাই। মা কারিমা বেগম একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করে তাদের ভরণপোষন করেন। তাদের তিনটি সন্তানই নরসিংদীর সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম স্কুলে লেখাপড়া করে। এদের একজন জুয়েনা। তার বিয়ের বয়স হওয়ায় তাদের মা অনেকটা হতাশায় ভুগতে থাকেন। এ অবস্থায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন ও স্কুলের সভাপতি নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন তার বিয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাদের সাথে একাত্বতা পোষন করেন স্কুলের কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও। সেই মতো বিয়েতে সকল খরচ ও আনুষ্ঠানিকতা ও খরচ জেলা প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে সম্পন্ন করেন। এই বিয়েতে উপহার হিসেবে ২০১৮ সালের প্রাথমিক শিক্ষা পদকে দেশসেরা জেলা প্রশাসক হওয়ায় প্রাপ্ত সম্মানীর সকল অর্থই তুলে দেন তিনি। একই জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকার ফরিদ মিয়ার ছেলে মনির হোসেনের সাথে জুয়েনার বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউজে ৬ সেপ্টেম্বর তাদের বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছেলেন।
এবাবে আনন্দঘন পরিবেশে বিয়ে দিতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জুয়েনার নানি জরিনা বেগম, মা কারিমা বেগম ও বরের মা সুখি বেগম। তারা বলেন, জেলা প্রশাসকের সহায়তায় এতো সুন্দর আয়েঅজনে বিয়ে আর কখনো দিখিনি, এতে আমরা খুশি ও উৎফুল্ল।
এই বিষয়ে স্কুলের প্রধান মিক্ষক জসিম উদ্দিন সরকার জানান, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জুয়েনাকে আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি বিশেষ শিক্ষা দিয়েছি যাতে সে ভবিষ্যতে চলতে পারে। আর সেটি সম্ভব হয়েছে স্কুল পরিচালনা কমিটির সহায়তা-ই। তাই আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে তাদের এই বিয়ে সম্পন্ন করতে পেরেছি।
জুয়েনার বিয়ে বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ জামেরী হাসান জানান, নরসিংদী যোগদানের পরই সুইড স্কুলে গিয়ে তাদের সাথে পরিচিত হই। এরপর থেকে তাদের সাথে গিয়ে আমি মজা করি, তাদের খোজখবর নিয়ে আমি আনন্দ উপভোগ করি। আর জুয়েনার বিয়ের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আমাদের উপলব্ধি থেকেই আয়োজন করা হয়েছে।
সুইড স্কুলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানান, সমাজের এমন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি অনেক রয়েছে। যাদের খোজ অনেকেই রাখেনা। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের এবিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি সামাজাকি কিছু ব্যতিক্রম কাজও আমাদের করতে হয়। এরই একটি অংশ হচ্ছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জুয়েনার বিয়ে। জুয়েনার পরিবারের এমন সাধ্য নেই যে তাকে ঘটা করে বিয়ে দিবে। তাই আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে জুয়েনাকে সর্বোচ্চ আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করতে পেরে আনন্দ লাগছে। আশা করি তাদের জীবন সুন্দর ও সুখের হবে।
বিয়েটি দিতে সামাজিক দায়িত্ববোধ কিছুটা হলেও পুরণ হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে সমাজের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এসকল ছেলে-মেয়েদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।