নিজস্ব প্রতিবিদক | নরসিংদী প্রতিদিন-
বৃস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ : রোহিঙ্গা, সাজাপ্রাপ্ত ও ফেরারী আসামি, দাগী অপরাধী, বয়স কম-বেশি দেখিয়ে বিদেশ যাবার জন্য আগ্রহী লোকজনের নামে জন্মসনদ তৈরি করে দেয়া হতো। পরবর্তীতে তারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের জন্ম সনদের তথ্য ভান্ডারে থাকা তথ্যের মিলে পেলে পাসপোর্ট পেয়ে যেতো। সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার নাম, বাবার নাম, বয়স, ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করলে তাদেরকে বিমান বন্দরে আটকানো যেতো না।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তাকারী এমন প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)।
এসময় পাসপোর্ট তৈরির জন্য ভুয়া জন্মসনদ, কাউন্সিলরের সিল, সরকারি দপ্তরের সিল, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ অবৈধ লেনদেনের ২ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকীর নেতৃত্বে একটি দল সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনে চারটি কম্পিউটারের দোকানে অভিযান চালিয়ে এদের আটক করে।
আটককৃত তিনজন হলেন- নারায়ণগঞ্জের ফজলুল করিম (৩৩), সাইফুল ইসলাম (২৪) ও আজিম হোসেন (২৬), নেত্রকোনার একটি ইউপির উদ্যোক্তা সদস্য মামুন মিয়া (৩৫), ঢাকার একটি সিটি কর্পোরেশন এর মাঈন উদ্দিন(৩৮) ও জাহাঙ্গীর (৩৬)।
আটক ফজলুল করিম সাংবাদিকদের জানান, ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বিনিময়ে এক একটি জন্মসনদ করে দেওয়া হতো। এজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা মাঈনুদ্দিন আহমেদ তাকে সহযোগিতা করতেন। মাঈনুদ্দিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত জন্মসনদের জাতীয় সার্ভারের নাম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে জন্মসনদ বের করা হতো।
অভিযান শেষে র্যাব-২ এর কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী ব্রেকিংনিউজকে জানান, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে এ বিষয়ে তদন্তের সূত্র ধরে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথমে তিনজনকে আটক করা হয়। এরা জন্মসনদ জাতীয় সার্ভার থেকে বের করতে সহযোগিতা করে আসছিলেন। পরে এদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এ প্রতারক চক্রের অপর সদস্যদের আটক করতে বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের বাইরে কম্পিউটারের দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় চারটি দোকানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া জন্মসনদ, কাউন্সিলরের সিল, সরকারি দপ্তরের সিল, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ অবৈধ লেনদেনের ২ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, এরা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তার যোগসাজশে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরি করে সরবরাহ করতেন। এদের ল্যাপটপ তল্লাশি করে ভুয়া জন্মসনদের হার্ডকপিও পাওয়া গেছে। এরা রোহিঙ্গাদেরকে এসব জাল সনদ দিয়ে পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করতেন।
জন্মসনদ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এরা সিটি করপোরেশন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাতীয় জন্মসনদ সার্ভারের নাম ও পাসওয়ার্ড নিয়ে সেখানে প্রবেশ করতেন। এ কাজের জন্য প্রতারক চক্রের সদস্যরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় এলাকায় ভিড় করতো।
এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।