নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন –
শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০১৯ :
নরসিংদীতে শত কোটি টাকার স্পিনিং মিল দখল করে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর। এ ঘটনায় সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের প্রায় দুই বছর পর অবশেষে ঢাকা থেকে এই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সুইডেন খ্যাত আতাউর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেসটিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) । পরে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে গ্রেফতারকৃত আতাউর রহমানকে নরসিংদী সদর মডেল থানায় প্রেরণ করে সিআইডি পুলিশ।
সম্প্রতি দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও খোলা কাগজ পত্রিকায় যা প্রকাশ করা হয়েছে তা নরসিংদী প্রতিদিন এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:- ‘সুইডেন আতাউরের দখলে শত কোটি টাকার মিল’ এ শিরোনামে বলা হয়ে ছিলো। নরসিংদীতে শত কোটি টাকার স্পিনিং মিল দখল করে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে সোনালি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
সোনালি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে ১২৪ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় মোল্লা স্পিনিং মিল। প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্প ঋণ এবং সাড়ে আট কোটি টাকা চলতি মূলধন ঋণ দেয় সোনালি ব্যাংক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেন ভূঁইয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে লোকসানের কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুল মতিন মোল্লা ব্যক্তিগত গ্যারান্টি এবং দায়দেনা থেকে অব্যাহতির শর্তে নিজের এবং দুই সন্তানদের সব শেয়ার আমজাদ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে হস্তান্তর করেন। শর্ত সাপেক্ষে মালিকানা পরিবর্তনের প্রস্তাব ব্যাংক কর্তৃপক্ষও অনুমোদন দেয়। তবে শর্ত পালন না করায় এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে জালিয়াতি ও ঋণ মঞ্জুরীপত্রের শর্তানুসারে ব্যাংক ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করায় সোনালি ব্যাংক মূল ব্যবস্থাপনা আবদুল মতিন মোল্লাকে মিলটির দায়িত্বভার গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়।
এদিকে, মালিকানা জটিলতার সুযোগে কারখানাটি দখলের ষড়যন্ত্র করেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ২০১৩ সালে আমজাদ হোসেন ভূঁইয়ার কাছ থেকে কারখানাটি ভাড়া নেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালিক পক্ষ কারখানা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলে সুইডেন আতাউর তা মানছেন না, এমনকি ভাড়াও দিচ্ছেন না। উল্টো মোল্লা স্পিনিং মিলের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে সুইডেন বাংলা টেক্সটাইল মিলের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন।
সুইডেন আতাউরের দখলে শত কোটি টাকার মিল
এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে দায়বদ্ধ শিল্প-প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ দখলদার আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সোনালি ব্যাংকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট বিভাগের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসামিরা ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ শিল্প-প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে তিন বছর ধরে দখল করে রেখেছে। তারা মেশিনারী ও যত্রাংশসহ সমূদয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের অর্থে কেনা এক কোটি টাকার যন্ত্রাংশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
মোল্লা স্পিনিং মিলের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন মোল্লা বলেন, ‘সুইডেন আতাউর কৌশলে কারখানাটি দখল করে আত্মসাত করার ষড়যন্ত্র করছে। সে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জোর করে কারখানাটি দখল করে রেখেছে। আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গেলেও প্রভাবশালীদের চাপে কেউ সহযোগিতা করছে না।’
তবে সুইডেন আতাউর বলেন, ‘আমি আমজাদ হোসেন ভূঁইয়ার কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য কারখাটি ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছি। ব্যাংক কেন দখলদার বলছে তদন্তেই তা প্রমাণ হবে।’ তাহলে ভাড়া দিচ্ছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ যারা কারখানার মালিকানা দাবি করছে তারা মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। সেই রায়ের আগে তারা মালিকানা দাবি করতে পারে না। জনপ্রতিনিধিদের কারণে তাদের ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
ব্যাংকের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্তকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে সুইডেন আতাউরের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সে অবৈধভাবেই কারখানাটি দখল করে পরিচালনা করছে। এ ব্যাপারে দ্রুত আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’