মোঃ মোখলেছুর রহমান। নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার ৯ নভেম্বর ২০১৯:
গাজীপুরে সদর থানাধীন বিলাসপুর এলাকার চাঞ্চচল্যকর রিনা আক্তার (৪৫) হত্যার মূল হোতাসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১।
শুক্রবার ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা রাতে গাজীপুরের স্পেশালাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের র্যাব সদস্যরা ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকা থেকে মোঃ রায়সুল ইসলাম রিফাত(১৯)কে আটক করে। সে ঢাকা জেলার সাভার থানার মোঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
র্যাব জানায় তার তথ্য মতে, এই খুনের সাথে সরাসরি জড়িত তার দুই বন্ধু মোঃ ইমন রায়হান(১৮), মোঃ হোসেন আপন(১৯)।
পরে র্যাব-১ সদস্যরা শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টা সময় ইমন রায়হানের নানার বাড়ী মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর বাজার এলাকা থেকে আপন হোসেনসহ ইমন রায়হানকে আটক করে।
উল্লেখ গত ০৩ নভেম্বর রিনা আক্তারকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে তার দেবরের ছেলে আপন হোসেনসহ ঘনিষ্ঠ ওই দুই বন্ধু। তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। রিনার স্বামী মোঃ সিদ্দিক বেপারী(৫০)কে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত-পা মুখ বেধে ধারালো অস্ত্র দ্বারা শরীর এর বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপায়ে গুরুতর জখম করে মৃত্যু ভেবে মেঝেতে ফেলে রাখে। পরে কৌশলে তারা পালিয়ে যায়।
গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী হোসেন, রিফাত, রায়হান এবং তিন জনই একেঅপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দীর্ঘদিন যাবৎ বখাটে তিন বন্ধু মাদকাসক্ত ও এলাকায়
মারামারি করে বেড়ায়।
তাদের মধ্যে স্বপ্ন জাগে বড় সন্ত্রাসী হয়ে প্রচুর টাকা আয় করবে সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ তাদের নাম শোনা মাত্র ভয় পাবে। এই স্বপ্নের বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে হোসেন আপন প্রস্তাব দেয় তার চাচা মোঃ সিদ্দিক বেপারীর অনেক টাকার মালিক, তিনি গাজীপুর সদর থানার বিলাসপুর এলাকায় ৬তলা বাড়ি নির্মাণ করছে, সেখানে চাচা, চাচী ও তাদের ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন(২০) ও তার বউকে পর্যায়ক্রমে হত্যা করে ১০/১৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণলংকার নিয়ে চলে যাবে।
এছাড়া হোসেনের চাচাতো ভাই দেলোয়ারের সুন্দরী স্ত্রীর উপর কুনজর ছিল হোসেনের। হোসেনের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ০২ নভেম্বর সকালে তিন বন্ধু ব্যাগে চাকু ও রশি নিয়ে আশুলিয়া হইতে রওনা দিয়ে দুপুরে গাজীপুরে হোসেনের চাচা মোঃ সিদ্দিক বেপারী এর বাসায় পৌঁছে খাবার খেয়ে তিন বন্ধু ছাদে বসে প্ল্যান করে।
তাদের প্লানিং ছিল ভোর রাতে হোসেনের চাচা মোঃ সিদ্দিক বেপারী যখন ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবে তখন প্রথমে চাচীকে হত্যা করবে, তারপর চাচা মসজিদ থেকে বাসায় ফিরলে চাচাকে হত্যা করবে; এরপর চাচাতো ভাই এবং সর্বশেষে চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীকে তিনজন ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করে বাসায় রক্ষিত নগদ টাকা ও স্বর্ণলংকার নিয়ে পালিয়ে যাবে। ডাকাতির টাকা দিয়ে তারা তিন বন্ধু ১টি ফ্লাট বাসা ও ১ টি পিস্তল এবং ১ টি মোটর সাইকেল ক্রয় করবে।
অপর দুই আসামী রিফাত এবং রায়হান এর স্বপ্ন ছিল ১ টি পিস্তল এবং ১ টি মোটর সাইকেল ক্রয় করে তাদের সন্ত্রাসী জীবন পরিচালনা করবে। তাদের পরিকল্পনা মতো হোসেনের চাচা মোঃ সিদ্দিক বেপারী ভোর রাতে নামাজের উদ্দেশ্য বের হলে চাচী রিনা আক্তারকে ডেকে তুলে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বিছানায় শোয়ায়ে রাখে। পরবর্তীতে চাচা মসজিদ থেকে ফেরত আসলে তাকেও রশি দিয়ে বেধে ফেলে।
তিনি আরো জানান,পরে তার চাচাকে জবাই করার চেষ্টা করে এবং ধারালো অস্ত্র দ্বারা তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপায়, চাচা মৃত্যুর ভান ধরে ফ্লোরে শুয়ে থাকলে আসামীরা বাসার আলমারি ভেঙ্গে নগদ ৩ লক্ষ টাকা ও বিপুল পরিমানের স্বর্ণলংকার নিয়ে নেয় এবং চাচাতো ভাই দেলোয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার শয়ন কক্ষের দিকে যায়। হোসেনের চাচা মোঃ সিদ্দিক বেপারী গুরুতর আহত অবস্থায় সিড়ির নিকট যেয়ে চিৎকার দিয়ে পড়ে যায়; ফলে সকাল হয়ে যাওয়ার কারণে আশপাশের লোকজন ছুটে আসতে থাকলে তিনজন তিন দিকে রক্তাক্ত জামা পড়া অবস্থায় ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার ০৪ দিন পর র্যাব-১ তাদেরকে আটক করে।
তিনি আরো বলেন, আটককৃত আসামীদেরকে গাজীপুর সদর থানায় হস্তান্তরের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।