খন্দকার শাহিন । নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার ৯ নভেম্বর ২০১৯:
নরসিংদীর মাধবদীতে দক্ষিণ চরভাসানিয়া গ্রামে মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েকে বখাটেদের উৎপাত থেকে রক্ষা করতে মা’ কুহিনুর বেগম বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। তবে মামলা করার পর থেকে দফায় দফায় হামলার শিকার হয় বাদী পক্ষ। আসামীদের ভয়ে ও মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদীর পরিবার। এছাড়া বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারের লোকজনকে মারধর, বাড়ী ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে মাধবদী থানায় পুনরায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবার।
রবিবার (১০ নভেম্বর) বিকালে মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা মোঃ আলী নেওয়াজ নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, তার মেয়েকে কিছুদিন পূর্বে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় জোরপূর্বক নৌকাযোগে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সম্ভ্রম বাঁচাতে সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মেয়ের মা কুহিনুর বাদী হয়ে বখাটেদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে।
মামলার পর থেকে আসামী মোক্তার (২৫), ইব্রাহিম (২৮), সিফাত (২৬) ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে ও কুখ্যাত ডাকাত দিয়ে গলায় রামদা ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেয় আসামী পক্ষের লোকজন। এরপর গত ৪ নভেম্বর সকাল নয়টার দিকে বখাটেরদলেরা রামদা, চাপাতি, কড়াল, লোহার শাবল, মাইরের কাঠ ও লাঠিসোটা নিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রীর বাড়িতে ডুকে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র, ১টি আলমারি, দুটি ফ্রিজ, ভাগিনা রহমত আলীর ঘরে থাকা এলইডি টিভি, ফ্রিজ, কাঠের আলমারি ও আসবাবপত্র ভাংচুর সহ আলমারীর ড্রয়ারে থাকা নগদ ১৪৭০০০/ টাকা ও দুইভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। এসময় ছয়টি ড্রামে ভিতরে থাকা একটনের উপরে চাউলে কেরসিন তৈল ঢেলে দেয় বখাটের দল। তার মা কুহিনুরকে চুলের মুঠি ধরে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানি করে ব্যপক মারধর করে ও শুক্কুর আলী নামে একব্যাক্তির দাড়ালো অস্ত্রে কুপে রক্তাক্ত জখম হয় কুহিনুর বেগম।
এছাড়া মাদ্রাসা ছাত্রীর চাচাতো ভাই রহমত উল্লাহ সহ তার স্বজনের উপরে হামলা চালিয়ে নগদ অর্থ সহ প্রায় সাত লক্ষ টাকার মত মালামাল লুট করে বখাটের দল।
এসময় ভুক্তভোগি পরিবারকে মামলা তুলে নিতে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে রাখে আসামী পক্ষে লোকজন, পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। পরে আত্মীয় স্বজনরা আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় কুহিনুর বেগম এর ডান চোখের পাশে ৪টি সেলাই করতে হয়।
এ ঘটনার থানায় খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এব্যাপারে আটজনের বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলো, চরভাসানিয়া গ্রামের জমির আলীর ছেলে মোঃ সিফর আলী (২২), সেফত আলীর ছেলে মোঃ জালাল মিয়া (৭০), মুসার ছেলে শুক্কুর আলী (২৫), জালাল মিয়ার স্ত্রী ফুলবাহার ওরফে বুড়ি(৬০), জালাল মিয়ার ছেলে জিন্না (৪৫), মনসুর আলীর ছেলে শাকিল (২০), জয়নালের স্ত্রী ওড়না বেগম (৩৫) ও জমির আলীর ছেলে শবদর আলী (২০) সবাই নরসিংদী সদর উপজেলা মাধবদী থানাধীন দক্ষিণ চরভাসানিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, সম্প্রতি মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক নৌকা যোগে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সম্ভ্রম বাঁচাতে সে নদীতে ঝাঁপ দেয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রুজু হয়। পুনরায় ঐ বখাটে দলের সদস্য সহ আটজনের বিরেুদ্ধে অভিযোগ করে মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবার। তদন্ত সাপেক্ষে এ অভিযোগেরও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।