নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন –
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ :
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ বাজারে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৫ জন নৈশ প্রহরীদের রশি ও কাপড় দিয়ে হাত, মুখ ও চোখ বেঁধে জুয়েলারি, ইলেক্ট্রনিক্স দোকান, সেনেটারী দোকান, টেলিকম দোকান ও মুদি দোকানসহ ১২ টি দোকানের তালা ভেঙ্গে মালামাল লুটে নিয়েছে একদল ডাকাত। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ১৪/১৫ জনের একদল ডাকাত প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে বলে দাবি করছে ভুক্তভোগীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দোকানের তালা- সার্টার কেটে জিনিসপত্র নিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায় ডাকাত দল।
ডাকাতির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন কালীগঞ্জ থানার ওসি একেএম মিজানুল হক। বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম জহিরুল ইসলাম, কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত ও কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ১৪/১৫ জনের একদল ডাকাত উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ বাজারে পিকআপযোগে হানা দেয়। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাজারের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ৫ নৈশ প্রহরীকে একে একে বেঁধে ফেলে ডাকাতদল। তাদের বাজারের মসজিদের চিপা গলিতে নিয়ে আটকে রেখে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটায় ডাকাতরা।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ও থানা সূত্রে জানা গেছে, ডাকাতদল কৃষ্ণ রায় শিল্পালয় থেকে ৩ ভরি স্বর্ণ, ২৫ ভরি রোপা, নগদ ৮০ হাজার টাকাসহ সিন্ধুক, লোকনাথ শিল্পালয় থেকে ২ ভরি স্বর্ণ, ২৫ভরি রোপা, নগদ ১৯ হাজার ৫০০শত টাকাসহ সিন্ধুক, ফাহাদ টেলিকম থেকে ২৪টি মোবাইল, নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল, শরীফ ইলেক্ট্রনিক্স দোকান থেকে ১৩টি এলইডি টিভি যার মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা, আওলদ টেলিকম থেকে ৫০টি মোবাইল, ১২টি চার্জার, ৪০টি মেমোরিকার্ড, ও নগদ টাকাসহ প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল, মাসুদের মুদি দোকান থেকে সিগারেটসহ ২০ হাজার টাকা, আজাহার স্টোর থেকে নগদ টাকা ও সিগারেটসহ প্রায় ৫ হাজার টাকার মালামাল, আরিফ হার্ডওয়ার থেকে নগদ টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্রসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা, জামান সেনেটারী দোকান থেকে ২ টি সাবমাচিবল যার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা, আজিম উদ্দিন ভাই ভাই টেলিকম থেকে মোবাইলসহ নগদ ১২ হাজার টাকাসহ ১২ দোকান থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, দিন দিন কালীগঞ্জে ডাকাতির আশঙ্কা বেড়েই চলছে। সাওরাইদ বাজারটি শীতলক্ষ্যা তীরবর্তী । বাজারে পাহারাদারের ব্যবস্থা থাকার পরও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ডাকাতি করেছে। এ যেন ফিল্মী স্টাইলে ডাকাতি । রাগে ক্ষোভে পুলিশের ভ‚মিকা নিয়ে বাজার ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজন বলছে, পুলিশের ঠিক মত টহলের ব্যবস্থা না থাকায়, তাদের অবহেলার কারনেই, ডাকাতির ঘটনা একের পর এক ঘটে চলছে।
গত ৯ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজারে ৭ জন নৈশ প্রহরীকে বেঁধে ৪টি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ডাকাতদল ৪৪ ভরি স্বর্ণ ও ৩৪০ ভরি রুপা এবং নগদ ২ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে যায়। উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ২শত গজের মধ্যেই বাজারে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছিল। পুলিশ এখনোও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে আটক বা মালামাল উদ্ধার করতে পারিনি বিধায় ভ্ক্তুভোগীসহ জনমনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। উলুখোলা বাজারে ডাকাতি আর সাওরাইদ বাজারে ডাকাতির পদ্ধতি একই ধরনের বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাইফুল্লাহ শেখ জানান, ১২ টি দোকানের তালা ভেঙ্গে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় দূর্ধর্ষ ডাকাতরা।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুল হক জানান, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ১৪/১৫ জনের এক ডাকাত উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ বাজারে প্রবেশ করে ওই বাজারের বিভিন্ন দোকানে হানা দিয়ে মালামাল লুট করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং আমরা আমাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত বলেন- খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।