ডেস্ক রিপোর্ট | নরসিংদী প্রতিদিন-
শুক্রবার,১৩ মার্চ ২০২০:
অন্তত পাঁচ জেলায় বিদেশ ফেরত ৯৭১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চাঁদপুরেই রয়েছেন ৬৫০ জন প্রবাসী। এছাড়াও মানিকগঞ্জে ১৬৯ জন, শরীয়তপুরে ১৬২ জন, কিশোরগঞ্জে ৬৫ জন ও নীলফামারীতে ৩৪ জন। শুক্রবার (১৩ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনরা।
তারা জানান, স্বাস্থ্য ও মাঠকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় বিদেশ ফেরত লোকজনের বাড়িতে গিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদেরকে বাড়িতে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, বিদেশ থেকে যারা দেশে ফিরেছেন ইতিমধ্যে তাদের তালিকা করা হয়েছে। জানুয়ারির ২৫ তারিখ থেকে ১৩ মার্চ শুক্রবার পর্যন্ত ৬৫০ জনের নামের তালিকা সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্বস্তির কথা হচ্ছে এই পর্যন্ত বিদেশ ফেরত কারোর মধ্যে জ্বর, সর্দি এবং কাশির কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১২ বেডের আইসোলেশন ইউনিট এবং সদর উপজেলার কেওয়ারজানি এলাকায় আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ১০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পর্যবেক্ষণে থাকারা সম্প্রতি ইতালি, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদিআরব ও সিঙ্গাপুর থেকে এসেছেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ১১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি ও তিনি (সিভিল সার্জন) সদস্য সচিব। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ইউএনওকে সভাপতি ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিবকে করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রশিদ জানান, ‘করোনা রোগী শনাক্তকরণের লক্ষ্যে বিদেশফেরত ১৬২ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখা হবে। ’
কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া এসব প্রবাসীদের মধ্যে মরিশাস, কাতার, কুয়েত, জর্দান, ওমান, মালদ্বীপ, দ. আফ্রিকা, বাহরাইন, ফ্রান্স,ইতালী, সৌদি আরব, ব্রনাই, মালয়েশিয়া, দুবাই, গ্রীস, ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রী রয়েছে বলে তিনি জানান।
নীলফামারীর সিভিল সার্জন রণজিৎ কুমার বর্মণ বলেন, ‘জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জনকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) রাখা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় শেষে ৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের লক্ষণ না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একজন বাকি আছেন। তিনি গত ১ মার্চ থেকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন।’
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ‘নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা এক চীনা নাগরিকসহ মোট ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যদি কোনও সমস্যা হয়, সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তাররা তাদের কার্যকর ড্রেস পরে ওই রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা ঢাকা আইইডিসিআরে পাঠাবেন। পরীক্ষায় যদি কিছু ধরা পড়ে তবে পরের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, জেলার ৬ উপজেলায় চীনফেরত ৩৫ জনকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় ১৪ দিন শেষে ৩৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১ মার্চ থেকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অপরজনকেও আগামীকাল শনিবার ছাড়া হবে।
তিনি আরও জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন করে ৩১টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ও ৮টি উপজেলা হাসপাতালে ২১টি বেড রয়েছে।
এছাড়াও নরসিংদীতে ৯, নাটোরে ৮, যশোরে ৭, চট্টগ্রামে ৭, রাজবাড়ীতে ৬, কুড়িগ্রামে ৬, কেরানীগঞ্জে ৫, ঝালকাঠিতে ৪, বগুড়ায় ৪, পাবনায় ৩, জামালপুরে ৩, ময়মনসিংহে ২ এবং খুলনা, সিলেট, নড়াইল ও নোয়াখালীতে একজন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।