নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন –
বুধবার, ২৫ মার্চ ২০২০ :
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সূজিদ চন্দ্র দও। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি প্রত্যয়ন পএ ছাড়া কিছুই পায়নি তার পরিবার। সুজিদের পরিবারের দাবী, রাষ্ঠ্রীয়ভাবে যেন তাদের পরিবারকে সম্মান দেখানো হয়।আজ মঙ্গলবার সুজিদের ছোট ভাই নারায়ন চন্দ্র দওের সঙ্গে আলাপকালে সমকালকে তিনি এ কথা জানান।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার দক্ষিণ পলাশ গ্রামের মৃত যজ্ঞেশ্বর চন্দ্র দত্তের ছেলে সুজিদ চন্দ্র দত্ত। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পড়ালেখার সুবাদে তিনি জগন্নাথ হলে থাকতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার মধ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর ও চালানো হয় নারকীয় হত্যাকান্ড। এতে প্রাণ হারায় হলের অসংখ্য মানুষ। জগন্নাথ হলের তথ্য মতে ওই সময় শহীদদের মধ্যে নাম জানা গেছে ৪ শিক্ষক ও ৬০ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর। শহীদ শিক্ষার্থীদের নামের তালিকায় সুজিদ চন্দ্র দত্তের নামও ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু মাত্র হল কর্তৃপক্ষ থেকে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়ার উপর একটি প্রত্যয়ন পত্র ছাড়া আর কোন কিছুই পায়নি সূজিদের পরিবার। দীর্ঘ ৪৯ বছর অতিক্রম হলেও জগন্নাথ হলে ট্রাজিডিতে নিহত সূজিদ চন্দ্র দত্তের পরিবারের খোঁজখবর নেয়নি কেউ। আজও সেই ভয়াল রাত এলে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে সূজিদের পরিবার। ভাই হারা বেধনা নিয়ে এখনো কান্নায় ভেঙে পড়ে সূজিদের ছোট ভাই নারায়ন চন্দ্র দত্ত। তিনি জানান, পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে সূজিদ চন্দ্র দত্ত ছিলেন তৃতীয়। সূজিদ ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রতিটি ক্লাশেই প্রথম স্থান অর্জন করতেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার সময় নারায়ন চন্দ্র অনেক বারই তার বড় ভাইয়ের হলে গিয়ে থাকতেন। ঘটনার মাস খানেক আগে সূজিদ বাড়ি আসেন। পরে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনতে আগের রাতে বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসেন। এটাই ছিল সূজিদের পরিবারের সাথে শেষ দেখা। নারায়ন চন্দ্র বলেন, ২৫ মার্চ সেই রাতে খবর পাই ঢাকায় অনেক গোলাগুলি হচ্ছে। পরের দিন শহর থেকে অনেকেই গ্রামে চলে আসতে দেখি। কিন্তু আমার ভাই আর আসেনি। এরপর ২৯ মার্চ আমি নিজেই সূজিদের খোঁজ নিতে ঢাকায় তার হলে যাই। হলে গিয়ে দেখি পুলিশ পুরো হল ঘিরে রেখেছে। পুলিশ আমাকে তখন হলে ঢুকতে দেয়নি। এরপর আমি ওই দিনই গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। পরে জানতে পারি ২৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ হলে পাকহানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে আমার ভাই সূজিদও নিহত হয়। শুনেছি হানাদার বাহিনীরা লাশগুলো গণকবর দিয়ে ফেলেছে। এখনও সেই রাতের কথা মনে হলে সূজিদের ছবি বুকে নিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ি। সূজিদ শহীদ হওয়ার পর হল কর্তৃপক্ষ আমাদের একটি প্রত্যয়ন পত্র দেয়, এছাড়া আমরা আর কিছুই পাইনি। শুধু জগন্নাথ হলের স্মৃতিস্তম্বে সূজিদের নাম রয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার এতোটা বছর পার হলেও আজও কেও আমাদের পরিবারে সূজিদের বিষয়ে কোন খোঁজখবর নিতে আসেনি। সরকারী ভাবে শহীদদের তালিকায় তার নাম আছে কিনা তাও জানিনা।নারায়ন চন্দ্রের দাবী, কালোরাতের শহীদ হিসেবে সরকার যেন তার ভাইকে স্বীকৃতি দেয়। তার পরিবার শহীদ হিসেবে যেন রাস্ট্রের সম্মান, সুযোগ সুবিধা পায়।
এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনির হোসেন সমকালকে জানান,১৯৭১ সালের ২৫মার্চ কালোরাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জগনাথ হলে শিক্ষার্থী সূজিদ চন্দ্র শহীদ হয়েছে এমন কোন তথ্য সরকারী ভাবে পলাশ উপজেলায় তালিকাভুক্ত হয়নি। তার পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করেছিলো। আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে শহিদদের তালিকার গেজেটে অন্তর্ভূক্ত করার।