শেখ আব্দুল জলিল | নরসিংদী প্রতিদিন-
বৃহস্পতিবার ০২ এপ্রিল ২০২০:
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নরসিংদীর পাইকারী সবজির বাজারগুলোতে ক্রেতা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ক্রেতার অভাবে ব্যাপক দরপতন ঘটেছে পাইকারী সবজির বাজারগুলোতে। গণপরিবহন সংকটের কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসছেন না সবজির বাজারে। এতে বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে রিকশাভ্যানের ভাড়াও উঠাতে পারছেন না কৃষকরা। সবজির উৎপাদন খরচ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন শুরু হয়েছে কৃষকদের।
কৃষক ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার শাকসবজির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার উৎপাদিত শাক-সবজির প্রায় ৭০ ভাগ-ই সরবরাহ করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, রপ্তানী করা হয় বিদেশেও। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারী সবজির বাজার বেলাবো উপজেলার বারৈচা, নারায়ণপুর, রায়পুরার জঙ্গী শিবপুর, শিবপুর উপজেলা সদর, সিএন্ডবি বাজার, পালপাড়া বাজারসহ সবজির সবগুলো পাইকারী বাজারে নেই পাইকারী ক্রেতা।
করোনাভাইরাস আতংক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাইকারী ক্রেতার অভাবে বিক্রি করা যাচ্ছে না উৎপাদিত সবজি। স্থানীয়ভাবে আসা ক্রেতাদের নিকট কিছু সবজি বিক্রি করা গেলেও এসব সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে উৎপাদিত সবজি বাজারে নিতে রিকশাভ্যানের ভাড়াও পাচ্ছেন না কৃষকরা। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ কিনতে না পারার পাশাপাশি মানবেতর জীবনযাপন করছেন কৃষকরা।
সোম ও মঙ্গলবার সরেজমিনে বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশের প্রায় ২০ গ্রাম হতে রিকশাভ্যান বোঝাই করে সিম, বেগুন, কুমড়া, লালশাক, ধনিয়া পাতা,শসাসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রির জন্য নিয়ে হাজির কৃষকরা। বাজারে প্রচুর সবজি উঠলেও ক্রেতা একেবারে কম। বাজারে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হচ্ছে একশ টাকায়, সীম বিক্রি হচ্ছে দুইশ বিশ টাকা মণ, শসা বিক্রি হচ্ছে চারশ টাকা মণ। এছাড়া ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না ডাটা, লাউ, কুমড়াসহ অন্যান্য সবজির। বিক্রি করতে না পেরে অনেকে বাজারেই ফেলে গেছেন সবজি। করোনা পরিস্থিতিতে সবজির বাজারে দরপতন ঘটায় হতাশায় পড়েছেন কৃষকরা।
বেলাব উপজেলার হোসেননগর গ্রামের কৃষক জাকারিয়া বলেন, বিক্রির জন্য সকাল ৮ টায় বারৈচা বাজারে বেগুন নিয়ে আসি। অথচ সকাল গড়িয়ে দুপুর ১২ টা বেজে গেলেও কেউ বেগুনের দাম জিজ্ঞাসা করেননি। সবজি বিক্রি করতে না পারলে সংসার নিয়ে খাব কী? সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ কিনবো কীভাবে?
হোসেন নগর গ্রামের অপর বেগুন চাষী আলমগীর পাঠান ও দড়িকান্দি গ্রামের সীম চাষী রমজান আলী বলেন, আমরা দুই বিঘা জমিতে বেগুন ও সীম আবাদ করেছি। বর্তমানে সীম ও বেগুনের বাজার দর এত কম, যা দিয়ে শ্রমিক খরচ ও ভ্যান ভাড়াও দিতে পারি না। যার কারণে জমিতে যাওয়া ও পরিচর্যা বন্ধ করে দিয়েছি। ফলে ক্ষেতের বেগুন ও সীম ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, বেগুন ১০০ টাকা মণ ও সীম ২২০ টাকা মণ দর কষে আর বাড়ছেন না কেউ। দুই সপ্তাহ আগেও বেগুন বিক্রি করেছি ৭শ টাকা মণ ও সীম বিক্রি করেছি নয়শ টাকা মণ। এ দামে বিক্রি করলে রিকশা ভাড়াও পাবো না।
বারৈচা ও নারায়ণপুর বাজার হতে সবজি ক্রয় করে চট্রগ্রাম ও রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন মো: রইছ মিয়া। তিনি বলেন, পরিবহন না পাওয়ায় এবং সবজির দাম কমে যাওয়ায় অব্যাহত লোকসানে পড়ে আমি সবজি কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। করোনার প্রার্দুভাব কেটে গেলে আবার এ ব্যবসা শুরু করবো।
নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দীন খাঁন সেন্টু বলেন, নারায়ণপুর ইউনিয়নসহ আশেপাশের এলাকাটি কৃষি নির্ভর। করোনা পরিস্থিতিতে সবজির মূল্য না পেয়ে কৃষি ও কৃষি শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। সরকারীভাবে কৃষকদের সহযোগিতা দেয়া উচিত। অন্যথায় সবজি উৎপাদনে ধস নামবে।
বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজিম উর রউফ খাঁন বলেন, করোনার পরিস্থিতির কারণে ক্রেতা কম থাকায় সবজির বাজারে দরপতন হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে দরিদ্র মানুষদের জন্য বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সাহায্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের জন্য আলাদা করে কোন সহযোগিতার ঘোষণা এখনও আসেনি। আমি মনে করি করোনার প্রার্দুভাব কেটে গেলে সবজির বাজার আবার ভালো হবে।