নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন-
শুক্রবার ০৩ এপ্রিল ২০২০:
বিশ্বকে স্তব্ধ করেছে এক নীরবঘাতক করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৪। মারা গেছেন ৫ জন আর সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন। করোনার বিস্তার রোধে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি থাকলে তা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল করা হয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শপিংমল এবং সব ধরণের যানবাহন। এই যানবাহন বন্ধ থাকায় দিশেহারা পরিবহন শ্রমিকরা। ঘোর অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের। অনেকের ঘরে নেই খাবার। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা।
শ্রমিকরা বলছেন, এভাবে আর কয়েকদিন চললে না খেয়ে মরতে হবে তাদেরকে। গাড়ির চাকা না ঘুরলে পরিবারেও জ¦লে না চুলা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকারের নির্দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহনের সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আপাতত বেকার কয়েক লাখ পরিবহন শ্রমিক। অনেকে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।
এ দুঃসময়ে কোনো পরিবহন নেতাও এগিয়ে আসছেন না। শ্রমিক কল্যাণের নামে শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করা হতো। আজ তার কোন হদিস নেই। কিন্তু এ দুঃসময়ে পাশে নেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। ফলে ঘোর অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে লাখো শ্রমিকের।
জানা গেছে, করোনায় বড় ধরনের আঘাত এসেছে যেসব সেক্টরে, তার মধ্যে পরিবহন খাত অন্যতম। দেশের সব গণপরিবহনের চাকা এখন অচল। সেইসঙ্গে প্রাইভেট পরিবহন ও পণ্য পরিবহন শ্রমিকদেরও অধিকাংশ এখন বেকার।
আপাতত কোনো কাজও নেই তাদের। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাইভেট কিছু পরিবহনের শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করলেও অধিকাংশ শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি পান। ট্রিপ দিলে নির্দিষ্ট টাকা আর ট্রিপ না দিলে কোনো টাকা নেই। ফলে কাজ না থাকলে ওই শ্রমিক ও তাদের পরিবারের না খেয়েই দিন কাটে।
পরিবহন শ্রমিক মনজুরুল ইসলাম বলছিলেন, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার পরিবার চালাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে মাস শেষ হলেই মাথার ওপর বোঝা বাসা ভাড়া। এখন আয় নেই, কিভাবে খাবো আর বাসা ভাড়া দেবো। এ পরিস্থিতিতে দিশেহারা এ পরিবহন শ্রমিক।
রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা পরিবহন শ্রমিক হোসেন মিয়া বলেন, আমি নয় নম্বর রুটের বাস চালাই। স্বাভাবিক সময়ে যেদিন কাজ করি সেদিন টাকা পাই। আর কাজে না গেলে কোনো টাকা নেই।
তিনি বলেন, ঘরে যে চাল-তরকারি ছিল তা দিয়ে কদিন কোনোরকম চলেছে। এখন আর চলছে না। কারো কাছ থেকে ধার নেবো সে রকমও কেউ নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখন না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে। আবিদুর রহমান নামে এক পরিবহন শ্রমিক দৈনিক বাংলা থেকে বাসাবো হিউম্যানহলার চালান।
তিনি জানালেন, রোজ হিসেবে গাড়ি চালান। নির্ধারিত বেতন থাকলে ভিন্ন কথা থাকতো। মাস গেলে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। গাড়ি চলুক কি, না চলুক তা মালিক বুঝতো। এখনতো পরিস্থিতি ভিন্ন। কাজ নেই তো টাকা নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই দুশ্চিন্তায়।
আসমানী পরিবহনের চালক পলাশ উদ্দিন বলেন, আমরা ট্রিপ দিলে টাকা পাই। দিনে যা আয় করি, দিনেই তা শেষ হয়ে যায়। পরদিন খেতে হলে কাজে যেতে হয়। শ্রমিকদের কোনো পুঁজিও নেই। ফলে কাজ না থাকলে না খেয়েই থাকতে হয়।
পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, তাদের কল্যাণের নামে সারা বছর কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। পরিবহন শ্রমিকদের কল্যাণের নামে এ চাঁদা উত্তোলন হলেও দুর্দিনে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এখান থেকে কেউ কোনোরূপ সাহায্য পেয়েছেন বলে তাদের জানা নেই।