জহিরুল ইসলাম | নরসিংদী প্রতিদিন –
সোমবার, ৬ এপ্রিল ২০২০ : ‘ভাই আমি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করি। আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার বাড়িতে খাবার নাই, দয়া করে আমাকে খাবার দিবেন…
‘কিস্তিতে অটো কিনেছি আজ ৩ মাস, ১৫ দিন যাবত বসা, এক ছেলে বয়স দুই বছর, বর্তমানে বড় অভাবে আছি। না পারি কারো কাছে বলতে, না পারি কারও কাছে সাহায্য চাইতে। যদি গোপনীয় ভাবে সহযোগীতা করেন, তাহলে উপকৃত হবো।
‘আমার বাড়িতে দুই দিন ধরে চাল নাই, ধার করে চলতেছি। এমন অবস্থা আপনার শরণাপন্ন হচ্ছি।’
এই ক্ষুদেবার্তা গুলো করোনা ভাইরাসে ঘরে নিদারুন কষ্টে কাঁটানো নরসিংদীর মনোহরদীর কয়েকটি মধ্যবিত্ত পরিবারের। যে পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাঁটালেও লোক লজ্জার ভয়ে খাদ্য সামগ্রীর জন্য হাত বাড়াতে পারেনা। তাই গোপনে শিল্পমন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের হটলাইন নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছে সহযোগীতার জন্য। ক্ষুদেবার্তা পাঠানো এমন শতাধিক পরিবারকে সোমবার বিকালে শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের ঘরে ঘরে এসব খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। এসময় খাবার হাতে পেয়ে কর্মহীন অসহায়, দুস্থ ও সুবিধা বঞ্চিত পরিবারগুলোর সদস্যদের মুখে হাসি ফোটার পাশাপাশি তারা প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন।
ক্ষুদেবার্তা গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পেয়েছে উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের ফরাজী পাড়ার মধ্যবিত্ত ১৪টি পরিবার। এলাকাটি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সরদার সাখাওয়াত হোসেনের বকুলের নিজ গ্রাম। করোনায় কষ্টে দিনাতিপাত করলেও কেউ খোঁজ নেয়নি। তাই ক্ষুদেবার্তা দিয়ে খাদ্য সহায়তা পাওয়ায় অভিভূত তাঁরা। তাঁদের একজন সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে ২ সপ্তাহ ধরে আমাদের কোন কাজ নাই। ঘরে খাবার নাই। কারো কাছে সাহায্য ও চাইতে পারি না। ফেইসবুকে মন্ত্রী সাহেবের ছেলের পোষ্ট দেখে দুপুরে আমরা হটলাইনে ম্যাসেজ পাঠাই। আর বিকালেই আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। অভাবের সময়ে এই খাবার দেয়ায় আমরা কয়েকদিন ভালো ভাবে কাটাতে পারবো।
মনোহরদী ও বেলাবতে অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এ পর্যন্ত অসহায় ও হতদরিদ্র ৬ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রীর পক্ষে তার পুত্র মঞ্জরুল মজিদ মাহমুদ সাদী এসব খাদ্যসামগ্রী, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও নগদ অর্থ বিতরণ করছেন। মনোহরদী ও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে দিনে ও রাতের আঁধারে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এসব সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি।
এছাড়া মধ্যবিত্ত বা নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য সংকট দূর করতে চালু করেন হটলাইন নম্বর। কোন খাদ্যের প্রয়োজন হলে মোবাইল নম্বরে নাম, ঠিকানা ও পেশা লিখে মেসেজ দিলেই ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।
শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, কর্মহীন, অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ চলমান আছে। জনসমাগম ও দোকানপাট লকডাউন থাকায় ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটা স্থবির। তাই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অর্থ কষ্টে ভুগলেও পারিবারিক ও সামাজিক মান সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করে সাহায্য নিতে চায় না। আমরা তাদের পাশে থেকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। কোন কষ্টে থাকলে আমাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে নাম, ঠিকানা ও পেশা লিখে মেসেজ দিলেই আমরা যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। আমার বাবা শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বদা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আপনাদের পাশে থাকবো আমি সাদী এবং নিঃস্বার্থে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেবার এক বিশাল বাহিনী।