আব্দুল কাইয়ুম, সাভার | নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার,১১ এপ্রিল ২০২০:
শনিবার ১১ এপ্রিল বিকাল পাঁচটা। অন্ত:সত্ত্বা একজন নারী থানার গেটে কান্না করছিল। জিজ্ঞাসা করলাম কি সমস্যা? বলল স্যার, আজকে আমার সিজারের ডেট কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই দেখে কোন ক্লিনিক বা কোন ডাক্তার আমাকে সিজার করছে না। আমি উক্ত মেয়েটিকে নিয়ে আমার পূর্ব পরিচিত ডাক্তার হ্যাপি ম্যাডামকে ফোন করি। এবং আমাদের গাড়িতে করে এসআই ওহিদ কে দিয়ে হ্যাপি জেনারেল হাসপাতালে পাঠাই। ডাক্তার হ্যাপি বিনা খরচে হ্যাপি জেনারেল হসপিটালে মেয়েটির সিজার করেন। একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করেছে। ওই রোগীর সকল ওষুধ এবং সিজারের সবকিছুই ব্যবস্থা করেছেন ডাক্তার হ্যাপি। ধন্যবাদ ডাক্তার হ্যাপি। আপনি অনেক বড় হন দোয়া করি। -অফিসার ইনচার্জ আশুলিয়া থানা। নিজের ফেসবুকে এমন স্ট্যাস্টাই তুলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিজাউল হক দিপু।
সড়ক থেকে তুলে নিয়ে অসহায় গর্ভবতীকে হাসপাতালে ভর্তি করালেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক দীপু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বামীহারা অসহায় এক গর্ভবতী নারী শ্রীমতি লিপি রানী। ঘরে দু’মুঠো চাল নেই, নেই আত্মীয় স্বজন। ডাক্তার দেখাবেন কিভাবে। কিভাবেই বা তিনি সম্ভব্য সন্তান প্রসবের দিনে সিজারের ব্যবস্থা করবেন। এসকল চিন্তায় বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার পাশে বসে কান্নাকাটি করছিলে ওই নারী। বিষয়টি নজরে আসে রিজাউ হক দিপুর। তিনি তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে করেছেন সিজারের ব্যবস্থা। সেই সদ্য ভূমিষ্ট কন্যা সন্তানের নাম রাখলেন শ্রীমতী দীপিকা রানী।
শ্রীমতি লিপি রানী (২৫) গাইবান্ধা জেলার গবিন্দগঞ্জ থানার আজহারা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দ। বর্তমানে আশুলিয়ার পলাশবাড়ির লাল মাটি এলাকার মিজানের বাড়ির ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
গত ১০ বছর আগে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর এলাকার শ্রী স্বপন মহন্তর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের ১ বছরের মাথায় স্বামীর হাত ধরে আশুলিয়া আসেন তিনি। স্বামী রিকশা চালায় আর লিপি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। বিয়ের ৬ বছর পরে একটি ছেলে সন্তান হয় তার নাম শ্রী জীবন ছেলের বয়স ৩ বছর। বর্তমান সন্তানটি গর্ভে আসলে গত তিন মাস আগে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়, কষ্ট করে দিন পার করছিলো মা ও তার সন্তান গতকাল ১০ এপ্রিল ছিলো সির্জারের সম্ভাব্য তারিখ। হাতে কোন টাকা পয়সা নাই অনেক হাসপাতালে ঘুরেও কারও কাছে সাহায্যর আশ্বাস না পেয়ে আশুলিয়া থানার সামনে কান্না কাটি করতে থাকেন তিনি।
শ্রীমতি লিপি রানী বলেন, ওসি স্যার আমার দিকে না তাকালে আমি হয়তো ডাক্তার অভাবে মরেই যেতাম। আর আমার সন্তানেরও হয়তো পৃথিবীর আলো দোখা হতো না। পৃথিবীতে যে এখনো এরকম উদার মানুষ আছে তা ওসি স্যার ও ডাক্তার আপাকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। তারা আমার দেবদূত তাদের কথা জীবনেও ভুলতে পারবো না।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রিজাউল হক দীপু বলেন,১১ এপ্রিল বিকাল ৫ টার দিকে একটি মেয়ে এসে থানার গেটের রাস্তায় কান্না করছিলো। জিজ্ঞাসা করলাম কি সমস্যা বলো। সে বলল স্যার আজকে আমার সিজারের ডেট কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই দেখে কোন ক্লিনিক বা কোন ডাক্তার আমাকে সিজার করছে না। পরে আমি মেয়েটিকে আমাদের গাড়িতে করে এসআই ওহিদ কে দিয়ে হ্যাপি জেনারেল হাসপাতালে পাঠাই। ডাক্তার হ্যাপি বিনা খরচে হ্যাপি জেনারেল হসপিটালে মেয়েটির সিজার করেন। ওই রোগীর সকল ওষুধ এবং সিজারের সবকিছুই ব্যবস্থা করেছেন ডাক্তার হ্যাপি। এসময় তিনি ডাক্তার হ্যাপিকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, আসলে ওই নারী যদি আমার দৃষ্টিতে না আসতো তাহলে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারতো। আল্লাহর অশেষ কৃপায় তা ঘটেনি। তাকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে সিজারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। থানায় অনেক মানুষই আসে, অনেক কাজই আমরা করে থাকি। আসলে মানবিক কাজ করতে পারলে আত্মতৃপ্তিবোধই আলাদা, আলাদা অনুভুতি পাওয়া যায়। ওই নারীর এক কন্যা সন্তান হয়েছে, মা ও মেয়ে দুজনই ভাল আছে। তাকে কিছু অর্থ সহযোগীতা করেছি এবং শিশুর বেড়ে ওঠার সব খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
এ ব্যাপারে হ্যাপী জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্তাধীকারি ডাক্তার রাশিদা রিয়াজ হ্যাপি বলেন, আমরা দেশের কাছে সমাজের কাছে অনেক কিছুই নেই সেদিক থেকে আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে ওই দায়িত্ববোধ থেকেই আমি ফ্রি মেডিকেল ট্রিটমেন্ট ও সিজার করেছি। আর আমি চাই না আমাকে নিয়ে ঢালাও প্রচার হোক। কারন এটা আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকেই করেছি। যা আমার কর্তব্য ছিলো। আর আমার অনুভুতি তো অবশ্যই অনেক আনন্দের। নতুন প্রাণ আমার হাত দিয়ে এই পৃথিবী এসেছে এ অনুভুতি সত্যিই অসাধারণ। ওই মা ও শিশুর যতটুকু চিকিৎসা ও ওষুধ দরকার তা আমি নিজেই সরবরাহ করবো।