আন্তর্জাতিক ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
সোমবার,২২ জুন ২০২০:
করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বটাকেই থামিয়ে দিয়েছে। মহামারি ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বহু দেশ হিমশিম খাচ্ছে। তবে এরইমধ্যে যেসব দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে এসেছে, সেসব দেশ এখন দুঃশ্চিন্তায় আছে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে। অতীতেও এধরনের মহামারি কমে গিয়ে আবার বাড়ার ইতিহাস আছে। যদি তেমন হয় তবে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কাটা কেমন হতে পারে?
বিগত শতকের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির দ্বিতীয় ধাপটি ছিল প্রথমটির চেয়েও ভয়ঙ্কর। সেই হিসেবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কি আসবে, যদি আসে তবে এর মাত্রা কতটা খারাপ হবে? এ নিয়েই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ কী?
সাগরের ঢেউয়ের ভাবা যেতে পারে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর একটা পর্যায়ে তা কমে আসে, এই চক্র একটি ঢেউ। সংক্রমণ আবার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়াটা দ্বিতীয় ঢেউ।
এ বিষয়ে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মাইক টিল্ডসলে বলেছেন, করোনা মহামারির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক কোনও সংজ্ঞা নেই। কেউ কেউ মহামারির প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবার তা কিছুটা বেড়ে যাওয়াকেই দ্বিতীয় ঢেউ বলেন। কিন্তু সেটি প্রথম পর্যায়েরই অংশ। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে দেখা যাচ্ছে। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে এবং আক্রান্তের সংখ্যঅ যথেষ্ট হ্রাস পেলে একটি পর্যায় বা ঢেউ বা ধাক্কা শেষ হয়।
মাঝে অনেকটা বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর জন্য সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে হবে। এই যেমন নিউজিল্যান্ডে ২৪ দিন এবং চীনে প্রায় ৫০ দিন ভাইরাসমুক্ত থাকার পর সেসব দেশে আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কিন্তু এগুলোকে মহামারির দ্বিতীয় পর্যায় বা দ্বিতীয় ঢেউ বলা যায় না।
কিন্তু ইরানে নতুন করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের এই ক্রমাগত সংখ্যা বাড়াতে মহামারির সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় পর্যায় বলা যেতে পারে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনের মতো ইউরোপের বড় বড় দেশগুলোও সেকেন্ড ওয়েভ ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছে।
সেকেন্ড ওয়েভের শুরুটা কেমন হবে?
সাধারণত লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পরই দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হতে পারে। জনজীবন ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনেক দেশেই লকডাউন তুলে নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে লন্ডনের হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ডা. অ্যাডাম কুচারস্কি মনে করেন, ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না রেখে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে যুক্তরাজ্য ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে হঠাৎ প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
জার্মানিতে নতুন করে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। দেশটিতে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কারখানায় এক হাজারের বেশি কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে ক্লাস্টারগুলো চিহ্নিত করে, স্থানীয়বাবে লকডাউন চালু করে এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো গেলে তবেই হয়তো দ্বিতীয় আঘাত থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। তা না হলে এগুলোই সেকেন্ড ওয়েভের কারণ হবে।
সেকেন্ড ওয়েভ কি প্রথমটির মতো হবে?
ধারণা করা হচ্ছে, সেরকম কিছু হলে সেটা হবে মানুষের গুরুতর ভুলের জন্য। শুরুর দিকে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে তিনজনের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। তখন ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়েছিল। এখন মানুষের আচরণ বদলেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতা বেড়েছ। তাই মানুষ নিজে থেকেই বিষয়গুলো জেনে যাচ্ছে, কীভাবে নিজেকে ও পাশের মানুষদের নিরাপদে রাখা যেতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপে আক্রান্ত বাড়তে করলেও সেটি অনেকটাই ধীরগতির হবে। তবে এখনও যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে আছেন তাতে করে দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম পর্যায়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
শীতকালে কি পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে?
ডা. কুচারস্কির ধারণা, স্থানীয়ভাবে ভাইরাসের প্রকোপ যেকোনও সময়ই বাড়তে পারে। তবে এর মানে সেটা দ্বিতীয় পর্যায় নয়।
ডা. মাইক টিল্ডসলে মনে করছেন, যদি বিধিনিষেধ উল্লেখযোগ্যভাবে শিথিল করা হয় তবে আমরা হয়তো আগস্টের শেষ দিকে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে দ্বিতীয় পর্যায় দেখবো।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, ‘বসন্ত (ইউরোপে করোনা মহামারির শুরুর সময়) আমাদের নিঃসন্দেহে সহায়তা করেছিল। দ্বিতীয় পর্যায় প্রায় অনিবার্য, বিশেষ করে যখন আমরা শীতের মাসগুলোতে যাবো।’
ভাইরাসটি দ্বিতীয় পর্যায়ে আঘাত হানার পর সেটি আদৌ দুর্বল হয়ে পড়বে কিনা তা এখনও নিশ্চিত করতে পারতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। কেননা, গত ৬ মাস ধরে বিশ্বকে টালমাটাল করে দেয়া ভাইরাসটির শক্তি ক্রমশ কমছে, এখনও এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেন না।