একজন সংবাদকর্মী আর রক্তচক্ষু। চিরচেনা ও জানা বহুল প্রচারিত শব্দ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সব সময় সময়,ক্ষমতার প্রতিকূলে কলম চালিয়ে সত্য প্রকাশে অনড় এ পেশার নাম সাংবাদিকতা। রাস্ট্র এর মুল্যমাণ কিতাবে ৪ নম্বর খুঁটির স্থান দিয়েছেন। কিন্তু পৃষ্টপোষকতা রাখেননি খুব একটা । শিল্পের আঁওতায় রেখেছেন বটে।
শ্রমের মুল্য নিয়ে কথা বলার লোক নেই। তবু কলম থেমে নেই। চলছে আপন গতিতে। চলুক অবিরাম দেশ মাতৃকার সেবায়৷ বাস্তবতা হলো এ পেশায় যারা কাজ করেন, তারা কোন পক্ষের আপনজন হতে পারেননা। ক্রমেই শত্রুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কারন ঘুরে ফিরে সব শ্রেণি পেশার লোকেরাই কম বেশি অপরাধ করে থাকে। আর সংবাদকর্মীরা তা দেখে চুপ থাকেন না। নানা কৌশলে তা তুলে ধরেন জাতির সামনে। আর যার বিরুদ্ধে লেখা হয়, সে ওই সাংবাদিকদের প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রকাশ্যে কিংবা গোঁপনে শুরু করে নানা কুটকৌশল। ঝোঁপ বুঝে কোপ মারার জন্য তৈরা থাকে তারা।
এভাবে বাড়তে থাকে ওঁত পেতে থাকা গুপ্তচরের সংখ্যা৷ আর সাগর- রুনির মতো নিজ ঘরেও অনিরাপদ ঘুম নিয়েই সংবাদকর্মীর জীবন চলাই এখন বাস্তবতা। অবশ্য নিজের বাস্তবতা দিয়েই বুঝতে পারি। বিগত ১৭ বছরে রিপোর্টিং এ কাজ করেছি বলেই বহু রক্তচক্ষু দেখতে হয়েছে। হয়তো সেই গরম চক্ষু ওয়ালাদের নাম প্রকাশ করবো না, কিন্তু তাদের আচরনগুলো আপনাদের শেয়ার করবো। সেই গরম চক্ষু ওয়ালাদের মধ্যে নিজ পেশার হিংসুটেও কম নয়। আমার লেখা লেখি শুরু হয় ২০০২ থেকে। স্থানীয় দূুটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় আমার হাতে খড়ি। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব আর আমার লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার কারনে প্রথমে জাতীয় দৈনিকে সুযোগ হয়নি। তবে গল্প,কবিতার ভক্ত হিসেবে নিজের লেখা বই, জাতীয় দৈনিকে ছড়া কবিতা লিখতে শুরু করি। মাস্টার্স পাশ করার পর বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে কাজ করার সুযোগ হয়৷ টিভি রিপোর্টি এ ও যুক্ত হই। আজো এ পেশায় আছি ভালো মন্দ আর নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে।
খুব মনে আছে, সাংবাদিকতার শুরুটা খুব তিক্ত ছিলো। অনেকটা যুদ্ধের মতো। আমি যেন বড্ড একা। তবু বাড়ির পাশের কেউ অপরাধ করলেও তার বিরুদ্ধে বাইনেমে সংবাদ প্রকাশ করতাম। এতে পাশের অপরাধী গুলো জোট বেঁধে হামলার চেষ্টা করতো। আমি আমার এলাকার তৎকালীন মাদকের সম্রাটদের বিরুদ্ধে, জুয়ার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম। আমাকে কাফনের কাপড় নিয়ে বাড়িতে থাকার হুমকী দেয়া হয়েছিলো। সে সময় থানায় জিডি করে, থানার ওসির সহায়তায় বাসায় ছিলাম। মা, বাবা পরিবারের লোকজন খুব শঙ্কিত ছিলেন।
তবে বাবা খুব সাহস দিতেন। সে সময় থেকে আমার এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা, জুয়ারীরা আমাকে ভালো চোখে দেখে না,দেখবেও না,দেখুক তা চাইও না। সে সময় থেকে একটি পক্ষ আমার প্রতি ওঁত পেতে আছে আজো। পাশের বিলে দুুএকজন ক্ষমতাধর মাছ চাষের নামে জাল,বানা দিয়ে দখল করে রেখেছিলো।সাধারন লোকদের মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত করে রাখে। তাদের বিরুদ্ধে লেখায় আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। সে দখলদাররা আজো আমার প্রতি কু নজরেই আছে।
ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় অনিয়মের ছবি,বেহাল দশা নিয়ে লেখায় সে সময়ের জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান, ঠিকাদারও আমাকে ভালো চোখে দেখননাই। সে সময় জনপ্রতিনিধিদের চোখ অন্ধ কি না তা সংবাদ শিরোনামে জানতে চাইতাম। ধর্মের নামে নামধারী ধর্ম ব্যবসায়ী,পীর ও ভন্ড মাজার বিরোধী লেখা আমার বহু। মাজারীরা আমার বাড়িতে আগুন দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলো। পরিষদে ডেকে তাদের মান গেছে বলে বিচার চেয়েছিলো। প্রশ্রয় দিয়েছিলো ক্ষমতাধররা। সেই মাজারীরা আজো আমার ক্ষতি করতে বিনিয়োগ করতেও প্রস্তুত। নদী দখল করে শিল্প কারখানা গড়া, পয়েস্থি জমির মাটি কেটে চুরির সংবাদ প্রকাশ ও উচ্ছেদে করায় সেখানেও একটি পক্ষের রেষানলে।
এক লোকের নামে গ্রাম প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ায় লিখে বিরোধিতা করায় তার সুপাত্র হওয়া সম্ভব হয়নি। হতদরিদ্রের চাল চুরি,ওজনে কম দেয়ার জন্য কথিত খাদ্য পরিদর্শক ও ঠিকাদারক সংবাদের কাঠগড়ায় নেয়ায় তার রূপগঞ্জ থেকে বদলি হয়। সেই রাগে সে ভুয়া আইডিতে অপপ্রচার চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে। পাড়া মহল্লার অলিতে গলিতে কিছু ভুয়া দাঁতের ডাক্তার ও তাদের অবৈধ চেম্বারের সংবাদ প্রকাশ করায় ওই ভুয়ারাও সুযোগ পেলেই সাংবাদিকদের সমালোচনা করে। সমিতির নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম করা, টাকা নিয়ে লাপাত্তা, এক গ্রামে ১০ সমিতি বিষয়ে লেখার কারনে সমিতি সংশ্লিষ্টরা আমাকে চুমু দিবেন তাও ভাবিনা।
রূপগঞ্জের মুল সমস্যা আবাসনের নামে বালি ফেলে জবর দখল বিষয়েও কম লিখা হয়নি৷ সাধ্যমতো পিপড়ার কামড় বসিয়েছি৷ এতে বালি ব্যবসায়ী আর আবাসন সংশ্লিষ্টরা আমাকে ভালো জানবেন তা আশা করা বোকামী। প্রশাসন কিংবা পুলিশের কতিপয় দূর্ণীতিবাজদের বিরুদ্ধেও কলম কম চলেনি। তারাও আমাকে ভালো জানবেন এমন আশাও গুড়েবালি বটে। এতো কাজের পর একজন সংবাদকর্মী স্বাভাবিকভাবেই বহু শত্রুর সঙ্গে বন্ধুবেশে বেঁচে থাকেন। আল্লাহর কৃপায়। যতক্ষণ হায়াত রেখেছেন ততক্ষণ ভালো থাকবো আমরা। তাই বাঁচার সময়টা বুকে সাহস নিয়েই বাঁচি।
সব চেয়ে মজার বিষয় হলো, পাঠকরা কিন্তু অপরাধ বিষয়ক সংবাদ পাঠে খুব উৎসাহী৷ফলে আমরা হয়তো নেগেটিভ সংবাদ বেশি প্রচার করি। কিন্ত এতো নেগেটিভ সংবাদের ভীরে পজেটিভ সংবাদের সংখ্যাও কম নয়। এখানেও আমরা বিতর্কের বাইরে নই। কারো পক্ষে লিখলে অপর পক্ষ চামচা বলে গালি দেয়। এতো গেলো পক্ষ বিপক্ষের কথা৷ আমরা কিন্তু আমাদের কিছু সহকর্মীর কাছেও নিরাপদ না। পল্টিবাজ আর সুযোগ সন্ধানীদের কাছে এ পেশায় অনেকেই জিম্মি। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। কে কাকে ল্যাং মারবে,কোন চেয়ার দখল করবে, কাকে কিভাবে ছোট করে নিজেকে জাহির করবে তা নিয়ে নিজেদের নিজেরাই বিপদে ফেলতে ব্যস্ত অনেকেই। আবার নীতি বিধি না থাকায় যে কেউ হয়ে যাচ্ছে সংবাদকর্মী।
কিছু প্রতিষ্ঠানে অর্থের বিনিময় নিয়োগ পাওয়া অযোগ্যরাও আজকাল সংবাদকর্মী। এ সমালোচনায় প্রকৃতার আজ বিতর্কিত। তবে ভালো মন্দ নিয়েই সংবাদকর্মী৷ ঢালাওভাবে সমালোচনায়, আলোচনায় মুল উদ্দেশ্যের সফল প্রতিফলন হচ্ছে কিংবা দেশ ও দশের জন্য কিছু করার চেষ্টা, সফলতা পাচ্ছি এটাই আমাদের প্রাপ্তি। ভালো থাকুক দেশটা। ভালো হোক শেষটা। মঙ্গল হোক সকলের। দূর হোক গজবের৷
লেখকঃ সাংবাদিক