ডেস্ক রিপোর্ট | নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার,১১ই জুলাই, ২০২০:
এক বুক স্বপ্ন নিয়ে আজ থেকে পনের বছর আগে কাজের সন্ধানে স্বামীর সাথে ঢাকায় এসেছিলেন শারমিন আক্তার। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়ে এখন তিনি রুটি ও ডিম বিক্রি করে সংসার চালান। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে গেলেই চোখে পড়ে শারমিন আক্তারের রুটির দোকান। প্রায় ৭/৮ বছর ধরে তিনি রুটি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
এর আগে মানুষের বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করতেন শারমিন আক্তার। এক মেয়ে ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। আগে তার স্বামী রং মিস্ত্রির কাজ করলেও বর্তমানে করোনার কারণে বেকার হয়ে বসে আছেন।
তবে মানবদরদি শারমিন শুধু ব্যবসাই নয়- আশপাশের দুস্থ মানুষের বিনামূল্যেও নাস্তা দেন এবং তাদের যথাসাধ্য খোঁজ রাখার চেষ্টা করেন।
শারমিন আক্তারের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়, বর্তমানে পরিবার নিয়ে ঢাকার শাজাহানপুরে থাকেন। ১৫ বছর আগে স্বামী মুজিবুর রহমান সাথে ঢাকায় এসেছিলেন। প্রথমে মানুষের বাসা বাড়িতে বুয়া কাজ করলেও পরবর্তীতে ফুটপাতে রুটি ও ডিমের দোকান দেন।
তিনি বলেন, ‘১৫ বছর আগে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে দুজনে ঢাকায় এসেছিলাম। স্বপ্ন ছিল দুজনে মিলে চাকরি করবো। গ্রামের চেয়ে একটু সুখে-শান্তিতে থাকবো সেই আশায়। কিন্তু বর্তমানে ফুটপাতে রুটি বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে, মেয়েকে পড়াশোনা করাতে হচ্ছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে সাত বছর ধরে আমি ডিম-রুটি বিক্রি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমার স্বামী রং মিস্ত্রির কাজ করতো। তখন সংসারটা একটু ভালই চলতো। কিন্তু গত চার-পাঁচ মাস থেকে কোনও কাজ নাই। বিশেষ করে এই করোনা আসার পর থেকে কাজ নাই।’
দিনে কত টাকার রুটি ও ডিম বিক্রি করতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এখানে তো আর বড়লোক মানুষ খাইতে আসে না। সিএনজি, রিকশা, ভ্যানচালক ও শ্রমিকরাই আমার এখানে খায়। তার পরেও এই করোনা না আসলে বিক্রিটা ভালই চলত। এখন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি করা যায়। তবে করোনা আসার আগে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেতো।’
১ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলে কত টাকা লাভ থাকে জানতে চাইলে শারমিন আর বলেন, ‘১ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে। এই নিয়ে কোনও মতো সংসার চলে।’
করোনার মধ্যে কোনও ত্রাণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও সাহায্য পাই নাই। আমাগো কি আর সাহায্য দিবে কেউ? কার কাছে যাবো? কে দিবে সাহায্য? কিছুদিন আগে ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছিল। সরকার নাকি টাকা দিবে। আমার ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছিলাম। কিন্তু কই কোনও টাকা তো পেলাম না।’
ভোটার আইডি কার্ড কারা নিয়েছিলো, সঙ্গে কোনও টাকাও নিয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে শারমিন বলেন, ‘আমরা তো আমাগো গ্রামের ভোটার। সেখানের মেম্বর আইডি কার্ড নিয়েছিলো। কিন্তু কোনও টাকা নেয় নাই। আমরাও কোনও টাকা পাই নাই।’