নিউজ ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন –
শনিবার,২২ আগস্ট ২০২০ঃ
নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের বৈলাইন গ্রামের আমির হোসেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে সিরাজ উদ্দিন নামেই চেনে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর আগে গলা কাটা ভিসায় কুয়েতে যান। সেখানে একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশ থেকে মানবপাচারে সম্পৃক্ত হয়ে কোটিপতি বনে যান। গড়েছেন কয়েকটি কারখানা, রাজধানীর উত্তরায় ছয়তলা বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। সিরাজ উদ্দিন কুয়েত যাওয়ার আগে এলাকায় তিন-চার বছর রিকশা চালিয়েছেন। মানবপাচারে তাঁর মূল সহযোগী নিজের ছোট ভাই আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন।
গত ১৩ আগস্ট দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে কুয়েতে মানবপাচার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি সিরাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিদেশি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি জানতে পারে, কুয়েতের এক নাগরিক ও বাংলাদেশের তিনজন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার করছে। এই চক্রটি ৯ শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে কুয়েতে পাচার করেছে। জনপ্রতি ছয় লাখ কিংবা তারও বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। উচ্চ বেতনের প্রলোভন দিয়ে কুয়েতে নেওয়ার পর তাঁদের ওপর নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। প্রতারিত এসব লোক কাজ তো পানইনি, বরং খাবার ও আবাসন সংকটের কারণে কুয়েতের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া পাচারকারীরা কুয়েতে তাঁদের আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছে। এ ঘটনায় দেড় বছর আগে কয়েকজন ভুক্তভোগী কুয়েতের সরকারি এজেন্সি ও জনশক্তি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। কুয়েতের এজেন্সি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সে দেশের আদালতে মামলা দায়ের করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চক্রের মূল হোতা কুয়েতের এক নাগরিক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আরেক হোতা সিরাজ উদ্দিন তখন পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
সিরাজের গ্রামের লোকজন জানায়, সিরাজের বাবা খলিল মিয়া পেশায় ছিলেন দিনমজুর। তাঁর চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সিরাজ দ্বিতীয়। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য। গত ১৮-১৯ বছর আগে তিনিও এলাকায় রিকশা চালাতেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রায় ২৫ বছর আগে ‘গলা কাটা’ (জাল) ভিসায় কুয়েতে পাড়ি জমান সিরাজ উদ্দিন। পরে নিজের ছোট ভাই হেলালকেও নিয়ে যান। এরপর সিরাজ উদ্দিন কুয়েতে মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ৯ বছর আগে ছোট ভাই হেলালকে পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশে। এরপর হেলালের মাধ্যমে ২০ থেকে ২৫ জনকে কুয়েতে নিয়ে যান সিরাজ। এভাবে তাঁদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে আসে। একপর্যায়ে এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করতে হেলালকে দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নির্বাচন করান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে চার বছর আগে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় একটি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সসহ অফিস কিনে নেন হেলাল। সেখানে হেলালের সঙ্গে কাজ করতেন সিরাজের বড় ছেলে শ্যামল। কুয়েত থেকে প্রবাসীরা তাঁদের দুর্বিষহ কষ্টের কথা পরিবারকে জানাতে শুরু করলে দুই বছর আগে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হেলালের অফিস ভাঙচুর করে। এরই মধ্যে সিরাজের বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচারের নানা অভিযোগ উঠলে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে পাচার করেন। তাঁর ছোট ভাই ইউপি সদস্য হেলালের মাধ্যমে তিনটি তাঁত কারখানা গড়ে তোলেন। বাড়িতে দোতলা দালান নির্মাণ করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে বৈলাইন গ্রামে সিরাজ উদ্দিনের বাড়িতে গেলে পুরুষ মানুষ কাউকে পাওয়া যায়নি। সিরাজ উদ্দিনের মেয়ে নদী আক্তার বাবার বিষয়ে কোনো কথাই বলতে রাজি হননি। আর তাঁর ভাই হেলাল উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রকাশিত খবর- কালের কণ্ঠ, মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
২২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০।