গরিবের সবজি হিসেবে বেশি পরিচিত কচু। ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধি ও ভালো বাজারমূল্য পাওয়ায় উপেজলার বির্স্তীণ এলাকায় এটি ছড়িয়ে পড়ছে। তাই অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে কৃষকেরা ঝুঁকিবিহীন কচু চাষে মনোযোগ দিচ্ছেন। কচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি থাকে। উঁচু জমিতে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের কচুর চাষ হলেও খাবার উপযোগী এই কালো জাতের কচুতে হাসি ফুটছে অনেক কচু চাষির।
এই কালো কচু চাষ করেই লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কচু চাষি ময়েজ উদ্দিন। তিনি উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের আবেদালী গ্রামের মৃত আফাজ আলীর ছেলে।
কচু চাষি ময়েজ উদ্দিন জানান, তেমন একটা খরচ এবং পরিশ্রম ছাড়াই দু-একটা নিড়ানী এবং জৈব সার দিয়ে উৎপাদনে লাভ বেশি হয়। এই সবজি চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচও কম লাগে। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, `নিজের বেশি জায়গা না থাকায় ময়েজ উদ্দিন তার বাড়ির পাশে ১৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কচু চাষ করেছেন। ১৩ বিঘা জমির ভাড়া এবং কচুর বীজ রোপণসহ ময়েজ উদ্দিনের মোট খরচ হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। কচুর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে তার সম্পূর্ণ জমি থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশাবাদী।
ময়েজ উদ্দিন তার কচু ক্ষেতের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলেন, খুব অভাব ছিল আমাদের সংসারে। ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে শুধু অভাব দেখেছি। এর মধ্যে বড় ছেলে চানমিয়া বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে করোনা ভাইরাসের জন্য আর বিদেশ যেতে পারেনি। তাই তাকে সাথে নিয়ে কৃষি কাজে সময় দিচ্ছি। ছেলেকে নিয়েই কচুক্ষেতে কাজ করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে কচু চাষ করি। কচু চাষে ভালো অভিজ্ঞাতাও হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি (২০২০-২১) খরিপ-১ মৌসুমে ঘাটাইলে ২৮০ হেক্টর জমিতে কচুর আবাদ করা হয়েছে। গত বছরে আবাদ হয়েছিল ১৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৫ হাজার ৩২৭ মেট্রিক টন। যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২৫ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিলশাদ জাহান জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী। আর কচু চাষ বেশ লাভজনক। আগাম কচু চাষ করলে, বাজার দর ভালো পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সবজি হিসেবে কচুর চাহিদা অনেক বেশি। কচু শাক একটি বিষমুক্ত সবজি। কচুর শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি , সি , ক্যালসিয়াম ও লৌহ আছে। কচু চাষিদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই এবং ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।